ঢাকা , শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের দ্রুত চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঠানোর আহ্বান

বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেটের সময় : ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪
  • / 406

 

বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে ক‍‍র্মী নেয় মালয়েশিয়া৤ আগের অনুমোদন দেয়া কোটা বা চাহিদাপত্রের আওতায় অপেক্ষায় থাকা সব দেশের ক‍‍র্মীদের  ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছে দেশটি। তাই এ সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক বা প্রক্রিয়ায় থাকা সকল কর্মী প্রস্তুতি নিচ্ছে মালয়েশিয়া যাওয়ার। আর কর্মীদের তাড়াহুড়ার সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠান বেশ চড়া দামে টিকিট বিক্রি করছে। ফলে টিকিটের জন্য কয়েকগুণ বেশি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে করে বিপাকে পড়ছেন মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীরা। এমনকি অনেক কর্মীকে মালয়েশিয়া যেতে ৫ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

 

বুধবার (২৯ মে ২০২৪) প্রবাস বা‍‍র্তাকে জনশক্তি ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এসব কথা বলেন৤  এরকম পরিস্থিতিতে বিমান ভাড়া কমানোর জন্য মালয়েশিয়ায় চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি । চৌধুরী কিরণ বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কয়েকটি চার্টার্ড বিমানে করে যেসব কর্মীর ভিসাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে তাদেরকে মালয়েশিয়া পাঠানো হলে বিমান ভাড়া কমানো সম্ভব হবে।

 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নানা সংস্থা কাজ করে যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালায়, ঔষধের দাম বেড়ে গেলে ঔষধ প্রশাসন, কিন্তু এই বিমান টিকেটের দাম বাড়লে কোনো সংস্থাকে এখনো দেখা যায়নি আইনগত ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত এই টিকেটের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হবে, শুধুমাত্র রিক্রুটিং এজেন্সির উপর দায় ভার দিয়ে যে তারা বিদেশে কর্মী পাঠায় তারাই টাকা বেশি নেয় এটি দিয়ে এই দায় এড়াতে পারবো না।”

 

তিনি বলেন, সব সময় চিৎকার করে বলি যেহেতু আমরা বিদেশে কর্মী পাঠাই, তার জন্য বাংলাদেশ থেকে লেবার ফেয়ার চাই। যখন বিদেশে কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আসে তখন একটা শর্ত দেয়া থাকবে যে, কর্মীদের জন্য ফ্লাইটে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লেবার ফেয়ার থাকবে। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যায় সেই দেশের ফ্লাইটে লেবার ফেয়ার থাকবে বা বিমান ভাড়া অন্যান্য যাত্রী থেকে কম থাকবে। যেখানে কর্মীদের ভাড়া কমানোর জন্য চিৎকার করছি সেখানে কর্মীরা ৩ গুন থেকে ৪গুন ভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে।

 

হাসান আহমেদ বলেন, সব চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে। মনে হচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে অরাজকতার শীর্ষে অবস্থান করে এয়ারলাইন্সগুলো কর্মীদের থেকে অর্থ আদায় করছে। প্রত্যেকটা কর্মী এখন হাহাকার করছে। কর্মীরা না পারছে রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিতে, না পারছে ৩১ তারিখের মধ্যে যাওয়ার নিশ্চয়তা গ্রহণ করতে।

 

তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি যাতে ৩১ মে’র মধ্যে এই কর্মীদের স্বল্প খরচে বা তাদের নির্দিষ্ট খরচে মালয়েশিয়া পাঠানো যায় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এছাড়া তিনি কি কারণে এই ফ্লাইট ভাড়া বেড়ে গেছে, কারা বাড়ালো এবং এই অপকর্মের সাথে কারা জড়িত আছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারে কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

সাধারণত, ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের সর্বোচ্চ দাম থাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চলতি মাসের শুরু থেকেই তা তিন গুণের বেশি হয়ে গেছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে এটি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হয়ে যায়।

 

২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সাথে শ্রমবাজার সম্প‍‍র্কিত সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ২ জুন ২০২২ ঢাকায় দু’দেশের যৌথ ওয়া‍‍র্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান নিজেও অংশ নেন সেই বৈঠকে। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেসময়ের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক ক‍‍র্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেদিনই শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথমে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ক‍‍র্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া। এরপর দুই ধাপে আরো ৭৫ রিক্রুটিং এজেন্সি বাড়িয়ে ক‍‍র্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় দেশটি। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসীজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সা‍‍র্ভিসেস লিমিটেড- বোয়েসেল যুক্ত হয় তালিকায়। ফলে মোট ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ক‍‍র্মী যাচ্ছে দেশটিতে। এছাড়া প্রায় ২ হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া থেকে ভিসা বা চাহিদাপত্র সংগ্রহ করছে এবং তারাই ক‍‍র্মী সংগ্রহ করছে।

শেয়ার করুন

মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের দ্রুত চার্টার্ড ফ্লাইটে পাঠানোর আহ্বান

আপডেটের সময় : ০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

 

বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে ক‍‍র্মী নেয় মালয়েশিয়া৤ আগের অনুমোদন দেয়া কোটা বা চাহিদাপত্রের আওতায় অপেক্ষায় থাকা সব দেশের ক‍‍র্মীদের  ৩১ মে’র মধ্যে মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর ঘোষণা আগেই দিয়েছে দেশটি। তাই এ সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক বা প্রক্রিয়ায় থাকা সকল কর্মী প্রস্তুতি নিচ্ছে মালয়েশিয়া যাওয়ার। আর কর্মীদের তাড়াহুড়ার সুযোগ নিয়ে অধিকাংশ উড়োজাহাজ প্রতিষ্ঠান বেশ চড়া দামে টিকিট বিক্রি করছে। ফলে টিকিটের জন্য কয়েকগুণ বেশি টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে করে বিপাকে পড়ছেন মালয়েশিয়া যাওয়া কর্মীরা। এমনকি অনেক কর্মীকে মালয়েশিয়া যেতে ৫ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।

 

বুধবার (২৯ মে ২০২৪) প্রবাস বা‍‍র্তাকে জনশক্তি ও অভিবাসন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ এসব কথা বলেন৤  এরকম পরিস্থিতিতে বিমান ভাড়া কমানোর জন্য মালয়েশিয়ায় চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি । চৌধুরী কিরণ বলেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কয়েকটি চার্টার্ড বিমানে করে যেসব কর্মীর ভিসাসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে তাদেরকে মালয়েশিয়া পাঠানো হলে বিমান ভাড়া কমানো সম্ভব হবে।

 

হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের নানা সংস্থা কাজ করে যেমন দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে ভোক্তা অধিকার অভিযান চালায়, ঔষধের দাম বেড়ে গেলে ঔষধ প্রশাসন, কিন্তু এই বিমান টিকেটের দাম বাড়লে কোনো সংস্থাকে এখনো দেখা যায়নি আইনগত ব্যবস্থা নিতে। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত এই টিকেটের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হবে, শুধুমাত্র রিক্রুটিং এজেন্সির উপর দায় ভার দিয়ে যে তারা বিদেশে কর্মী পাঠায় তারাই টাকা বেশি নেয় এটি দিয়ে এই দায় এড়াতে পারবো না।”

 

তিনি বলেন, সব সময় চিৎকার করে বলি যেহেতু আমরা বিদেশে কর্মী পাঠাই, তার জন্য বাংলাদেশ থেকে লেবার ফেয়ার চাই। যখন বিদেশে কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আসে তখন একটা শর্ত দেয়া থাকবে যে, কর্মীদের জন্য ফ্লাইটে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ লেবার ফেয়ার থাকবে। যেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কর্মী যায় সেই দেশের ফ্লাইটে লেবার ফেয়ার থাকবে বা বিমান ভাড়া অন্যান্য যাত্রী থেকে কম থাকবে। যেখানে কর্মীদের ভাড়া কমানোর জন্য চিৎকার করছি সেখানে কর্মীরা ৩ গুন থেকে ৪গুন ভাড়া বেশি গুনতে হচ্ছে।

 

হাসান আহমেদ বলেন, সব চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রে। মনে হচ্ছে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে অরাজকতার শীর্ষে অবস্থান করে এয়ারলাইন্সগুলো কর্মীদের থেকে অর্থ আদায় করছে। প্রত্যেকটা কর্মী এখন হাহাকার করছে। কর্মীরা না পারছে রিক্রুটিং এজেন্সিকে টাকা দিতে, না পারছে ৩১ তারিখের মধ্যে যাওয়ার নিশ্চয়তা গ্রহণ করতে।

 

তিনি আরো বলেন, সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি যাতে ৩১ মে’র মধ্যে এই কর্মীদের স্বল্প খরচে বা তাদের নির্দিষ্ট খরচে মালয়েশিয়া পাঠানো যায় তার উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে। এছাড়া তিনি কি কারণে এই ফ্লাইট ভাড়া বেড়ে গেছে, কারা বাড়ালো এবং এই অপকর্মের সাথে কারা জড়িত আছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারে কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।

 

সাধারণত, ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুর যেতে উড়োজাহাজের টিকিটের সর্বোচ্চ দাম থাকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। চলতি মাসের শুরু থেকেই তা তিন গুণের বেশি হয়ে গেছে। মাসের মাঝামাঝি সময়ে এটি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা হয়ে যায়।

 

২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার সাথে শ্রমবাজার সম্প‍‍র্কিত সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর ২ জুন ২০২২ ঢাকায় দু’দেশের যৌথ ওয়া‍‍র্কিং গ্রুপের বৈঠক হয়। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান নিজেও অংশ নেন সেই বৈঠকে। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন সেসময়ের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক ক‍‍র্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। সেদিনই শ্রমবাজার খোলার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হয়। প্রথমে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ক‍‍র্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মালয়েশিয়া। এরপর দুই ধাপে আরো ৭৫ রিক্রুটিং এজেন্সি বাড়িয়ে ক‍‍র্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয় দেশটি। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ওভারসীজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সা‍‍র্ভিসেস লিমিটেড- বোয়েসেল যুক্ত হয় তালিকায়। ফলে মোট ১০১ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে ক‍‍র্মী যাচ্ছে দেশটিতে। এছাড়া প্রায় ২ হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়া থেকে ভিসা বা চাহিদাপত্র সংগ্রহ করছে এবং তারাই ক‍‍র্মী সংগ্রহ করছে।