মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্য মাল্টি-টায়ার লেভি আরোপের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ‍সরকার। দেশটির কোম্পানিগুলি যত বিদেশি কর্মী নিয়োগ করবে সে সংখ্যা অনুপাতে লেভি বা কর আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন মানব সম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম। নিয়োগকর্তা যত বেশি বিদেশি কর্মী নিয়োগ করবে তাকে ততো বেশি লেভি শোধ করতে হবে। কোম্পানির বিদেশি কর্মীর সংখ্যা অনুযায়ী যে লেভির ধাপ করা হবে সেটাকেই বহু স্তর বিশিষ্ট ( মাল্টি টায়ার লেভি সিস্টেম) লেভি ব্যবস্থা বলা হয়েছে। এই অর্থ নিয়োগকর্তাকে বহন করতে হবে। সরকার এই ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে যা এই বছরের শেষে বা আগামী বছর থেকে বাস্তবায়ন করা হবে।

মানবসম্পদ মন্ত্রী স্টিভেন সিম বলেছেন, “আমাদের লক্ষ্য এই বছর মন্ত্রিসভায় এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করা।” তিনি বলেন, সরকার আগামী বছরের মধ্যে দেশে মোট ২.৪ মিলিয়ন বিদেশি কর্মী সংখ্যা বজায় রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। তিনি বলেন বর্তমান সংখ্যাটি অনেক বেশি। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড মতে এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় প্রায় ২.১২ মিলিয়ন বিদেশি কর্মী রয়েছে। এই ২.১২ মিলিয়ন কে ২.৪ মিলিয়ন এ নির্দিষ্ট করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। ফলে ০. ২৮ মিলিয়ন অর্থাৎ মাত্র ২৮ হাজার বিদেশি কর্মী ১৫ টি সোর্স কান্ট্রি থেকে নিয়োগ করতে পারে। মন্ত্রী বলেন, সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মোট বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ২০২৫ সালের মধ্যে মোট শ্রমশক্তির ১৫ শতাংশ এর বেশি হতে পারবে না।

১০ মে, কনকর্ড ক্লাবের সভায় বক্তৃতাকালে বলেন , এজন্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার এবং শিল্পের সাথে সম্পৃক্তদের নিকট থেকে প্রাথমিক তথ্য প্রতিক্রিয়া সংগ্রহ করতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, মাল্টি-টায়ার লেভি সিস্টেমটি হল কোম্পানিগুলিকে বিদেশি কর্মীদের উপর তাদের নির্ভরতা কমাতে এবং স্থানীয়দের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের জন্য উৎসাহিত করা।

সিম বলেন, বহু-স্তর শুল্ক থেকে আহরিত রাজস্ব স্থানীয় কর্মীদের দক্ষতা উন্নত করার জন্য, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হবে। প্রকৃত পক্ষে এ সেক্টরের ( এস এম ই) মাল্টি টায়ার লেভি দেওয়া বেশ অসুবিধা হতে পারে বলে অনুমান করা হয়েছে। মিঃ সিম বলেছেন, অভিবাসী কর্মীদের অভিযোগ এবং অভিযোগগুলি পরিচালনা করার জন্য শ্রম বিভাগের অধীনে একটি বিশেষ ইউনিট স্থাপন করা হবে।

কারণ বিদেশি কর্মীদের অনেকেই হয়তো অভিযোগ করার জন্য এগিয়ে আসার সাহস পাচ্ছেন না। একজন স্থানীয় কর্মী নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তার নিজ বাড়িতে থাকতে পারেন কিন্তু একজন বিদেশি কর্মী নিয়োগকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে সে তার হোস্টেলে আবদ্ধ হয়ে যায়।”

সিম বলেন, বিশেষ ইউনিট স্থাপন অভিবাসী কর্মীদের বিশেষ গুরুত্ব দেবার ব্যাপার নয় বরং এটি বিদেশি কর্মীদের প্রতি সুআচরণ এবং অভিযোগগুলি মোকাবেলা করার আরও মানবিক পদ্ধতি হিসাবে দেখা উচিত।

১ মে শ্রম দিবস উদযাপনের ঠিক আগে অভিবাসী কর্মীদের সাথে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থাগুলি এই ধারণাটি তৈরি করেছিল বলে মন্ত্রী জানান। তিনি শ্রম বিভাগকে স্পেশাল ইউনিটের জন্য পরিকল্পনা তৈরি করতে বলেছেন।

মালয়েশিয়ার স্থানীয়দের দক্ষ ও কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে মিঃ সিম বলেছেন যে স্থানীয় কোম্পানিতে স্থানীয়দের ইন্টার্নশিপ চালু করার জন্য একটি বিশেষ কর্মসূচির অধীনে একটি তহবিল গঠনের জন্য মন্ত্রণালয় ৫০ মিলিয়ন রিঙ্গিত বরাদ্দ করেছে। মন্ত্রী বলেন, ইলহাম কেসুমা প্রোগ্রামের অধীনে ইন্টার্নশিপ করার জন্য ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার জন অংশগ্রহণকারীদের লক্ষ্য করা হয়েছে ।

মন্ত্রী যোগ করেন, প্রোগ্রামটি ট্যালেন্ট কর্পোরেশন মালয়েশিয়া বিএইচডি (ট্যালেন্টকর্প) দ্বারা পরিচালিত হবে। এই প্রোগ্রামে অংশ নেওয়া সংস্থাগুলি এই উদ্দেশ্যে এইচআরডিএফ কর্পোরেশন ধার্যের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবহার সহ দ্বিগুণ কর রেয়াতের জন্য যোগ্য হবে।

এক প্রশ্নের উত্তরে মিঃ সিম বলেছে যে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ইন্টার্নরা তাদের ইন্টার্নশিপ করা কোম্পানিগুলিতে চাকরি নেয়। কনকর্ড ক্লাব হল সম্পাদক এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠন যা রাজনীতিবিদ এবং মূল নীতি নির্ধারকদের সাথে বৈঠক করে। সেখানেই মন্ত্রী কথাগুলো বলেন।