ঢাকা , রবিবার, ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
‘মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কোন অনিয়ম থাকবে না’ মালয়েশিয়ায় জোরপূর্বক শ্রমের শিকার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় আসিফ নজরুল ইতালিতে বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে :ড. আসিফ নজরুল মালয়েশিয়াজুড়ে টার্গেটেড স্ট্রাইক অপারেশন, বাংলাদেশিসহ ১২৭০ অভিবাসী আটক মালয়েশিয়ার কোটা ভারুতে ১১৪ বাংলাদেশি আটক বিভিন্ন দেশের ৪৮,৩১৯ বন্দীকে ফেরত পাঠালো মালয়েশিয়া মহান মে দিবসে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক কার্ড চালুর ঘোষণা কর্মীদের প্রতি মালয়েশিয়ান মালিকের অফুরান ভালোবাসা ‘ইশরাক হোসেন ইস্যুতে বিবৃতি দিয়ে এনসিপি আদালত অবমাননা করেছে’ মালয়েশিয়ায় জাল পারমিট বিক্রির মূল হোতা বাংলাদেশি আটক

“মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষায় পদক্ষেপের আহ্বান”

আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া
  • আপডেটের সময় : ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪
  • / 291

মালয়েশিয়ায় অভিবাসী কর্মীদের দুর্দশার চিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তারা বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের অস্তিত্বহীন কাজের জন্য শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে মালয়েশিয়াকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করার আহবান জানিয়েছেন।

 

শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশটির স্থানীয় অনলাইন ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন । বাংলাদেশিদের সাথে প্রতারণা সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে হতাশ হয়েছেন। মালয়েশিয়াতে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসে তাদের কাজ না দিয়ে প্রতারণা করেছে।

 

এ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিচালিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের প্রতারণামূলক নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে বলেও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, অভিবাসীরা প্রতারিত হচ্ছে কারণ তাদের জাল কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হয়েছিল এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করেছিলো যা, তাদের ঋণের জালে বন্দি করেছে।

 

তারা উল্লেখ করেছেন যে, অনেক অভিবাসী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন। তাদের সাথে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ নেই। প্রায়ই তাদের ভিসাহীন করে থাকতে বাধ্য করা হয়। যার ফলে তারা গ্রেপ্তার হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে দুর্ব্যবহার এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

 

এ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে কর্মবিহীন বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা খুবই নাজুক এবং অসম্মানজনক।

 

তারা আহবান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াকে অভিবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

 

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছে, আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে, উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এটার শেষ হওয়া দরকার। আর এই শোষণমূলক নিয়োগের জন্য অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এসব বেসরকারি ব্যবসা ও প্রতারণামূলক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’।

 

জাতিসংঘের এ দাসত্ব বিষয়ক বিশেষ রিপোর্টটি তোমোয়া ওবোকাতা কর্তৃক জারি করা। যিনি, পাচার সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক। এছাড়া, সিওভান মুল্লালি,যিনি অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক। গেহাদ মাদি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিশেষ এ রিপোর্টটি করেছেন।

 

এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিছু অভিবাসী তাদের শোষণের কথা জানানোর জন্য কঠোর প্রতিশোধের সম্মুখীন হয়েছে। তারা মালয়েশিয়াকে কর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা গ্রহণে আরও কার্যকরভাবে শ্রমিক অভিবাসন পরিচালনা করার আহবান জানিয়েছেন।

 

তারা আরো বলেছে যে, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপলস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের অধীনে বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে। মালয়েশিয়াকে অবশ্যই শোষণের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা এবং সহায়তা করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে হব। ব্যক্তি পাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনী সুরক্ষা কার্যকর করতে হবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে হবে।

 

তারা এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এ দলটি।

 

গত অক্টোবরে, অভিবাসী অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধীনস্থ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অফ দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর কাছে এই বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।

 

কর্মীদের পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ হিসাবে বর্ণনা করে, তিনি তাদের দরিদ্র জীবনযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে আবদ্ধ কোয়ার্টার, দুর্বল স্যানিটেশন ও সীমিত খাবার এবং কীভাবে তারা অতিরিক্ত নিয়োগ ব্যয়ের কারণে ঋণী হয়ে পড়েছে।

 

অ্যান্ডি হল দাসপ্রথা, পাচার, অভিবাসী এবং দারিদ্র্যের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টারদের কাছে নথিযুক্ত অভিযোগও পাঠিয়েছিল। বিশেষে করে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এবং পিয়া ওবেরয় যিনি জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিকের মাইগ্রেশন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা।

শেয়ার করুন

“মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুরক্ষায় পদক্ষেপের আহ্বান”

আপডেটের সময় : ১১:৪৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা। তারা বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের অস্তিত্বহীন কাজের জন্য শোষণের হাত থেকে রক্ষা করতে মালয়েশিয়াকে বিশেষ কিছু ব্যবস্থা করার আহবান জানিয়েছেন।

 

শনিবার (২০ এপ্রিল) দেশটির স্থানীয় অনলাইন ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের নিযুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন । বাংলাদেশিদের সাথে প্রতারণা সম্পর্কে এক প্রতিবেদনে হতাশ হয়েছেন। মালয়েশিয়াতে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিয়ে এসে তাদের কাজ না দিয়ে প্রতারণা করেছে।

 

এ বিবৃতিতে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে পরিচালিত অপরাধমূলক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অভিবাসী কর্মীদের প্রতারণামূলক নিয়োগের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করা হচ্ছে বলেও তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, অভিবাসীরা প্রতারিত হচ্ছে কারণ তাদের জাল কোম্পানি দ্বারা নিয়োগ করা হয়েছিল এবং অতিরিক্ত নিয়োগ ফি দিতে বাধ্য করেছিলো যা, তাদের ঋণের জালে বন্দি করেছে।

 

তারা উল্লেখ করেছেন যে, অনেক অভিবাসী মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেখেন। তাদের সাথে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ নেই। প্রায়ই তাদের ভিসাহীন করে থাকতে বাধ্য করা হয়। যার ফলে তারা গ্রেপ্তার হয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে দুর্ব্যবহার এবং নির্বাসনের ঝুঁকিতে পড়তে হয়।

 

এ বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় কয়েক মাস বা তার বেশি সময় ধরে কর্মবিহীন বাংলাদেশি অভিবাসীদের অবস্থা খুবই নাজুক এবং অসম্মানজনক।

 

তারা আহবান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়াকে অভিবাসীদের ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় তাদের শোষণ, অপরাধীকরণ এবং অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে রক্ষা করার জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।

 

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছে, আমরা রিপোর্ট পেয়েছি যে, উভয় সরকারের কিছু উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এটা অগ্রহণযোগ্য এবং এটার শেষ হওয়া দরকার। আর এই শোষণমূলক নিয়োগের জন্য অপরাধীদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

 

বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এসব বেসরকারি ব্যবসা ও প্রতারণামূলক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা ‘সম্পূর্ণ অপর্যাপ্ত’।

 

জাতিসংঘের এ দাসত্ব বিষয়ক বিশেষ রিপোর্টটি তোমোয়া ওবোকাতা কর্তৃক জারি করা। যিনি, পাচার সংক্রান্ত জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক। এছাড়া, সিওভান মুল্লালি,যিনি অভিবাসীদের মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক। গেহাদ মাদি এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা বিশেষ এ রিপোর্টটি করেছেন।

 

এ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, কিছু অভিবাসী তাদের শোষণের কথা জানানোর জন্য কঠোর প্রতিশোধের সম্মুখীন হয়েছে। তারা মালয়েশিয়াকে কর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা গ্রহণে আরও কার্যকরভাবে শ্রমিক অভিবাসন পরিচালনা করার আহবান জানিয়েছেন।

 

তারা আরো বলেছে যে, মালয়েশিয়াকে অবশ্যই ইউএন গাইডিং প্রিন্সিপলস অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের অধীনে বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে হবে। মালয়েশিয়াকে অবশ্যই শোষণের শিকার ব্যক্তিদের শনাক্তকরণ, সুরক্ষা এবং সহায়তা করার জন্য প্রচেষ্টা জোরদার করতে হব। ব্যক্তি পাচারের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইনী সুরক্ষা কার্যকর করতে হবে এবং দেশের আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা সমুন্নত রাখতে হবে।

 

তারা এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ এ দলটি।

 

গত অক্টোবরে, অভিবাসী অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল, জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধীনস্থ সংস্থা ইউনাইটেড নেশনস অফিস অফ দ্য হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর কাছে এই বাংলাদেশি কর্মীদের দুর্দশার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন।

 

কর্মীদের পরিস্থিতিকে ‘ভয়াবহ’ হিসাবে বর্ণনা করে, তিনি তাদের দরিদ্র জীবনযাত্রার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে আবদ্ধ কোয়ার্টার, দুর্বল স্যানিটেশন ও সীমিত খাবার এবং কীভাবে তারা অতিরিক্ত নিয়োগ ব্যয়ের কারণে ঋণী হয়ে পড়েছে।

 

অ্যান্ডি হল দাসপ্রথা, পাচার, অভিবাসী এবং দারিদ্র্যের বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টারদের কাছে নথিযুক্ত অভিযোগও পাঠিয়েছিল। বিশেষে করে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ অন বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস এবং পিয়া ওবেরয় যিনি জাতিসংঘের এশিয়া প্যাসিফিকের মাইগ্রেশন এবং মানবাধিকার বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা।