মালয়েশিয়ায় এক বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে স্থানীয় তিন সরকারি কর্মকর্তাসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। সোমবার (১৩ নভেম্বর) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে সেলাঙ্গর রাজ্য পুলিশ।
রাজ্য পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, গত ৭ নভেম্বর অপহরণের ঘটনা ঘটে। তিনদিন পর ৯ নভেম্বর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। অপহরণ করা বাংলাদেশি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিক। এর পাশাপাশি মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তবে তার নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
বিবৃতিতে সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান দাতুক হুসেইন ওমর খান বলেন, থানায় সাংবাদিকের ভাগিনার দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে ক্লাং উপত্যকায় অভিযান চালায় পুলিশ। অভিযানে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মধ্যে একজন বাংলাদেশিও রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তারকরা বাংলাদেশির নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের জানা যায়, অভিযান চালিয়ে যাদের কে গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা অপহরণের সাথে জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। সেলাঙ্গর রাজ্যের পুলিশ প্রধান জানান, তিন সরকারি কর্মচারীকে তদন্তের জন্য গোম্বাক জেলা পুলিশ সদর দফতরের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (বিএসজে) কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এই ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে স্থানীয় তিন বেসামরিক নাগরিককেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া আরও তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম তিনজনকে মালয়েশিয়ার দণ্ডবিধির ৩৮৫ ধারা এবং অপর তিনজনকে ৩৪২ ধারা অনুযায়ী গ্রেফতার করে তাদর দুই দিনের জন্য রিমান্ডে নেয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর ভুক্তভোগী (সাংবাদিক) হারিয়ান মেট্রোতে এক সাক্ষাতে জানান, নিজেদেরকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য দাবি করে ৩ জন স্থানীয় ব্যক্তি তার পুত্রজায়ার বাসায় প্রবেশ করে এবং থানায় মামলার কথা বলে তুলে নেয়। পরে তাকে সেলাঙ্গর রাজ্যের শাহ আলমের একটি অজ্ঞাত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন ব্যক্তি যোগ দেয়। সেখান থেকে একটি বিএমডব্লিউ গাড়িতে করে তাকে গভীর জঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে মারধর শুরু করে অপহরণকারীরা। মারধরে দেলোয়ার হোসেন ও কাজী নামে দুই বাংলাদেশি সরাসরি যুক্ত ছিল সেই সঙ্গে ১৯ লাখ মালয় রিঙ্গিত মুক্তিপণ দাবি করে বলে এ প্রতিবেদককে জানান ভুক্তভোগী সাংবাদিক। তিনি জানান, মানিলন্ডারিং ও সিন্ডিকেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের সাথে প্রতারণার বিরুদ্ধে কাজ করায় তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
তিনি জানান, সেখান থেকে এক ঘণ্টারও বেশি পথ পাড়ি দিয়ে তারা তাকে সেলাঙ্গরের ক্লাংয়ের একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর আবারও শুরু হয় নির্যাতন। এতে হাত-পাসহ সারা শরীরে ক্ষত তৈরি হয়। নির্যাতনের এক পর্যায়ে তাকে একটি ভিডিও দেখানো হয় যেখানে একটি লোককে জবাই করা হচ্ছে বলে দেখা যায়। ওই ভিডিও দেখিয়ে হুমকি দেয়া হয়, তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ না দিলে তার সাথেও একই কাজ করা হবে অর্থাৎ জবাই করে হত্যা করা হবে। এতে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে যান সাংবাদিক। প্রাণভয়ে অপহরণকারীদের ৫০ হাজার মালয় রিঙ্গিত অনলাইনে ট্রান্সফার করে দেন ভুক্তভোগী। পরদিন (৮ নভেম্বর) অপহরণকারীদের একজন তার শরীরের ক্ষতের চিকিৎসার জন্য ক্লিনিকে নিয়ে যায়। ওই সময় ক্লিনিক থেকে পালিয়ে যান তিনি। গিয়ে অনেকের কাছে সাহায্য চাইলেও কেউ সাহস করে এগিয়ে আসেনি। তারপ[র তারা আবারও তাকে ধরে নিয়ে যায় এবং নির্যাতন করে।
অপহরণের তৃতীয় দিন (৯ নভেম্বর) সাংবাদিককে সেলাঙ্গর রাজ্যের ক্লাংয়ের কাপার এলাকার একটি ব্যাংকের পাশে ছেড়ে দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিক গোমবাক জেলা পুলিশ সদর দফতরে (আইপিডি) একটি অভিযোগ দায়ের করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সেলাঙ্গর পুলিশ প্রধান দাতুক হোসেন ওমর খান। এদিকে অপহরণের শিকার বাংলাদেশি সাংবাদিক মুক্তিপেলেও নিরাপওাহীনতায় রয়েছেন বলে ১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার সকালে ফোন করে এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন তিনি।