ঢাকা , শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুবাই গিয়ে প্রতারিত, ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে (ভিডিওসহ)

Print Friendly, PDF & Email

 

প্রতারিত প্রবাসী প্রতিকারের আশায় দেড় বছর যাবত ঘুরছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি থেকে শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে। এখনও পাননি কোনো সমাধান। তবে আশা করছেন আইনি পদক্ষেপে ন্যায় বিচার পাবেন তিনি।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশ দুবাইতে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরত আসার গল্প সম্প্রতি প্রবাস বার্তার কাছে তুলে ধরেন গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের বাউ পাড়া গ্রামের দুবাই ফেরত প্রবাসী মো: সালাহ উদ্দিন।

 

সাক্ষাৎকারে ভুক্তভোগী জানান, পারিবারিক অভাব অনটন নিরসন ও আর্থিকভাবে নিজেকে সচ্ছল করতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি ‘মেসার্স এবকো ওভারসীজে’র ( আরএল- ৪৮১) মাধ্যমে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর দুবাই যান। রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে চুক্তি ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুবাইয়ের একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়ে দিবেন। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর নানা টালবাহানা শুরু করে এজেন্সিটির দালাল। আজ নয় কাল এভাবেই কেটে যাই দুই মাস। এরমধ্যে ঋণের টাকার পেরেশানি ও থাকা খাওয়ার দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানায় সালাহ উদ্দিন।

 

এমন বাস্তবতায় ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ভুক্তভোগী পরিবারকে ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দেয় অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিটি। তবে এর জন্য জোরপূর্বকভাবে অঙ্গীকারনামায় সই নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সালাহ উদ্দিন। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এজেন্সিকে না জানিয়ে অন্য কোম্পানিতে যোগদান করায় উক্ত এজেন্সিটি আর কোনোভাবে এ বিষয়ে দায়বদ্ধ নয়। অথচ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তিনি একপর্যায় বাধ্য হয়েই সেই অঙ্গীকার নামায় সই করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী।

 

এরপর সালাহ উদ্দিন পরিবারের মাধ্যমে ধার দেনা করে দেশ থেকে আরো ১ লাখ টাকা নেন। সবমিলে দুবাইয়ে এক বাংলাদেশিকে দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। কথা ছিল দেশটিতে যেকোনো একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু সেখানেও প্রতারণার শিকার হন তিনি। দুবাইয়ে কোনো গতি করতে না পেরে সবশেষ ২০২২ সালের ২৩ মার্চ নিজ খরচে দেশে ফেরত আসেন ভুক্তভোগী সালাহ উদ্দিন।

 

বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং দেশে ঋণের টাকার জন্য পাওনাদারে চাপে যখন বিপর্যস্ত সালাহ উদ্দিন তখন জানতে পারলেন বিএমইটিতে লিখিত অভিযোগ দিলে এর সুষ্ঠু সমাধান পাবেন। সেই আশায় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ প্রথম দফায় লিখিত অভিযোগ দেন বিএমইটিতে। তবে এক মাস কেটে গেলেও পাননি কোনো প্রতিকার। এর জন্য কিছুটা হতাশ হলেও ন্যায় বিচারের আশায় ২০২২ সালের ২৭ জুন দ্বিতীয় দফায় আবারো লিখিত অভিযোগ দেন বিএমইটিতে। এরপর কেটে যায় আরো একটি বছর।

 

সালাহ উদ্দিনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট বিএমইটির তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে জানানো হয়, তার অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিটির অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই মর্মে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এবকো ওভারসীজকে ( আরএল- ৪৮১) পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ ও এর সমাধানের জন্য নোটিশ দেয়া হয় বিএমইটি থেকে। কিন্তু এরপর দুই মাস কেটে গেলও কোনো সমাধান পাননি তিনি। একপর্যায় বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এবং ২৩ অক্টোবর ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন সালাহ উদ্দিন।

 

এরমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো তথ্য না পেলেও ৭ নভেম্বর মোবাইলে ফোন করে তাকে ডেকে নেয়া হয় পল্টন থানায়। ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ- ডিএমপিতে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত শুনেন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এরপর তাকে জানানো হয়, এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি পদক্ষেপ নিবেন তারা।

 

প্রবাস বার্তার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুবাই ফেরত ভুক্তভোগী সালাহ উদ্দিন বলেন, “পাওনাদারের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য নিজের থাকার ছোট্ট জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছি। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। ২ বছরের এক মেয়ে ছাড়াও আছে বৃদ্ধ বাবা মা। এখন নিঃস্ব হয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি ন্যায় বিচারের আশায়। যেন আমি আমার ক্ষতিপূরণ বুঝে পাই এবং আবারো বিদেশ গিয়ে পরিবারের হাল ধরতে পারি।”

 

Tag :

দুবাই গিয়ে প্রতারিত, ক্ষতিপূরণের আশায় ঘুরছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে (ভিডিওসহ)

আপডেট: ০৭:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৩
Print Friendly, PDF & Email

 

প্রতারিত প্রবাসী প্রতিকারের আশায় দেড় বছর যাবত ঘুরছেন সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে। লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি থেকে শুরু করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে। এখনও পাননি কোনো সমাধান। তবে আশা করছেন আইনি পদক্ষেপে ন্যায় বিচার পাবেন তিনি।

 

সংযুক্ত আরব আমিরাতের দেশ দুবাইতে গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরত আসার গল্প সম্প্রতি প্রবাস বার্তার কাছে তুলে ধরেন গাজিপুর সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের বাউ পাড়া গ্রামের দুবাই ফেরত প্রবাসী মো: সালাহ উদ্দিন।

 

সাক্ষাৎকারে ভুক্তভোগী জানান, পারিবারিক অভাব অনটন নিরসন ও আর্থিকভাবে নিজেকে সচ্ছল করতে বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি ‘মেসার্স এবকো ওভারসীজে’র ( আরএল- ৪৮১) মাধ্যমে ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর দুবাই যান। রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে চুক্তি ছিল ২ লাখ ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে দুবাইয়ের একটি কোম্পানিতে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি নিয়ে দিবেন। কিন্তু দেশটিতে যাওয়ার পর নানা টালবাহানা শুরু করে এজেন্সিটির দালাল। আজ নয় কাল এভাবেই কেটে যাই দুই মাস। এরমধ্যে ঋণের টাকার পেরেশানি ও থাকা খাওয়ার দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানায় সালাহ উদ্দিন।

 

এমন বাস্তবতায় ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ভুক্তভোগী পরিবারকে ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা দেয় অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সিটি। তবে এর জন্য জোরপূর্বকভাবে অঙ্গীকারনামায় সই নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সালাহ উদ্দিন। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এজেন্সিকে না জানিয়ে অন্য কোম্পানিতে যোগদান করায় উক্ত এজেন্সিটি আর কোনোভাবে এ বিষয়ে দায়বদ্ধ নয়। অথচ বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং তিনি একপর্যায় বাধ্য হয়েই সেই অঙ্গীকার নামায় সই করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগী।

 

এরপর সালাহ উদ্দিন পরিবারের মাধ্যমে ধার দেনা করে দেশ থেকে আরো ১ লাখ টাকা নেন। সবমিলে দুবাইয়ে এক বাংলাদেশিকে দিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। কথা ছিল দেশটিতে যেকোনো একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিবেন। কিন্তু সেখানেও প্রতারণার শিকার হন তিনি। দুবাইয়ে কোনো গতি করতে না পেরে সবশেষ ২০২২ সালের ২৩ মার্চ নিজ খরচে দেশে ফেরত আসেন ভুক্তভোগী সালাহ উদ্দিন।

 

বিদেশ গিয়ে প্রতারণার শিকার এবং দেশে ঋণের টাকার জন্য পাওনাদারে চাপে যখন বিপর্যস্ত সালাহ উদ্দিন তখন জানতে পারলেন বিএমইটিতে লিখিত অভিযোগ দিলে এর সুষ্ঠু সমাধান পাবেন। সেই আশায় ২০২২ সালের ২৭ মার্চ প্রথম দফায় লিখিত অভিযোগ দেন বিএমইটিতে। তবে এক মাস কেটে গেলেও পাননি কোনো প্রতিকার। এর জন্য কিছুটা হতাশ হলেও ন্যায় বিচারের আশায় ২০২২ সালের ২৭ জুন দ্বিতীয় দফায় আবারো লিখিত অভিযোগ দেন বিএমইটিতে। এরপর কেটে যায় আরো একটি বছর।

 

সালাহ উদ্দিনের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট বিএমইটির তদন্ত রিপোর্টের মাধ্যমে জানানো হয়, তার অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিটির অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই মর্মে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি মেসার্স এবকো ওভারসীজকে ( আরএল- ৪৮১) পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে অভিযোগকারীকে ক্ষতিপূরণ ও এর সমাধানের জন্য নোটিশ দেয়া হয় বিএমইটি থেকে। কিন্তু এরপর দুই মাস কেটে গেলও কোনো সমাধান পাননি তিনি। একপর্যায় বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ২২ অক্টোবর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে এবং ২৩ অক্টোবর ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন সালাহ উদ্দিন।

 

এরমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগের অগ্রগতি সম্পর্কে কোনো তথ্য না পেলেও ৭ নভেম্বর মোবাইলে ফোন করে তাকে ডেকে নেয়া হয় পল্টন থানায়। ঢাকা মেট্রপলিটন পুলিশ- ডিএমপিতে লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত শুনেন থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা। এরপর তাকে জানানো হয়, এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করা হবে এবং অভিযোগের সত্যতা পেলে আইনি পদক্ষেপ নিবেন তারা।

 

প্রবাস বার্তার কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে দুবাই ফেরত ভুক্তভোগী সালাহ উদ্দিন বলেন, “পাওনাদারের ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য নিজের থাকার ছোট্ট জমিটাও বিক্রি করে দিয়েছি। পরিবারের সদস্য পাঁচজন। ২ বছরের এক মেয়ে ছাড়াও আছে বৃদ্ধ বাবা মা। এখন নিঃস্ব হয়ে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছি ন্যায় বিচারের আশায়। যেন আমি আমার ক্ষতিপূরণ বুঝে পাই এবং আবারো বিদেশ গিয়ে পরিবারের হাল ধরতে পারি।”