ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে প্রবাসীর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত আসামীর নাম জহিরুল ইসলাম। সে নিহত জেসি আক্তারের বড় বোনের মেয়ের স্বামী। তার বাড়ি নরসিংদীর মাধবদী থানার আলগীরচর গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুল খালেক।
নরসিংদীর মাধবদী উপজেলা টাটাপাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে গেল মঙ্গলবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পারিবারিক কলহের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় জহিরুল ইসলাম। পরে বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (বাঞ্ছারামপুর) আদালতের বিচারক সাগত সৌম্যের কাছে ১৬৪ ধারায় হত্যার বিবরণ দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন জহিরুল।
এর আগে বুধবার সকালে নিহত জেসি আক্তারের বাবা আবুল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে একটি মামলা করেন। জহিরুলকে সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বিকেলে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) সোনাহর আলী শরিফ।
পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিয়ের পর থেকেই পারিবারিকভাবে অশান্তিতে ছিলেন জহিরুল। শ্বশুরবাড়ি থেকে নানাভাবে তাকে চাপে রাখা হত। আর শ্বশুর-শাশুড়ি চলতেন খালা শাশুড়ি জেকি আক্তারের পরামর্শে।
“পারিবারিক বিরোধ নিষ্পত্তির সহায়তা চাইতে সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে জহিরুল নরসিংদী থেকে জেকি আক্তারের বাসায় আসেন। আলোচনায় জহিরুলের সঙ্গে জেকি আক্তারের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে বটি দিয়ে জহিরুল জেকি আক্তারের মাথার পিছনে ও ঘাড়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
“বাসায় তখন জেকি আক্তারের বড় ছেলে মাহিন এবং ছোট ছেলে মহিন ঘুমিয়ে ছিল। শব্দ শুনে মাহিন জেগে উঠে এবং চিৎকার দিয়ে জহিরুলকে থামাতে যায়। তখন জহিরুল তাকেও বটি দিয়ে কোপ দেয়। মাহিন বাঁচার জন্য দৌঁড়ে নিজের কক্ষে ঢুকে বাাঁচার চেষ্টা করে। জহিরুল তাকে টেনেহিঁচড়ে মায়ের পাশে ফেলে আবার কোপায়। পরে মুখে গামছা দিয়ে বেঁধে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এ সময় ছোট ছেলে মহিন ঘুম থেকে উঠে দরজায় দাঁড়িয়ে ছিল এবং সব দেখছিল। মহিন সব বলে দিতে পারে এই ভয়ে জহিরুল বাটাল নিয়ে তার দিকে অগ্রসর হয়। ভয়ে মহিন বাথরুমের দিকে দৌড় দেয়। জহিরুল বাথরুমের দরজার সামনে মহিনকে ধরে কণ্ঠনালীর নিচের দিকে বাটাল দিয়ে আঘাত করে। পরে বাথরুমে ঢুকে মহিনের মাথার ডান পাশে বাটাল ঢুকিয়ে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে বাথরুমে ফেলে রাখে।
“সবার মৃত্যু নিশ্চিত করে জহিরুল তার রক্তাক্ত লুঙ্গি ও ফুলহাতা শার্ট পরিবর্তন করেন। পরে তা পলিথিনে করে ব্যাগে নিয়ে মেইন গেট বাহিরের দিক থেকে লাগিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পুলিশ জহিরুলের ফুলহাতা শার্টটি ভেজা অবস্থায় উদ্ধার করেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) জয়নাল আবেদীন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) সোনাহর আলী শরীফ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) সিরাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার সকালে উপজেলার আইয়ুবপুর ইউনিয়নের চর ছয়ানী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন প্রবাসীর স্ত্রী জেসি আক্তার (৩৫), তার বড় ছেলে মাহিন (১৪) ও ছোট ছেলে মহিন (৭)। তবে অক্ষত আছে সাত মাস বয়সী তার আরেক শিশু।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, নিহত জেসি আক্তারের স্বামী শাহ আলম সৌদি আরব প্রবাসী, তিনি বর্তমানে সৌদি আরব রয়েছে। তিনি বলেন সকালে কাজের মহিলা এসে বাসার গেইট লাগানো দেখতে পান। অনেক ডাকাডাকি করলেও গেইট খুলছিল না। পরে বাড়ির অন্যান্য লোকজনকে নিয়ে চেষ্টা করে গেইট খুলে সবাই ঘরের ভেতরে ঢুকেন। ভেতরে গিয়ে দেখেন ঘরের মেঝেতে ও বাথরুমে শাহ আলমের স্ত্রী ও দুই সন্তানের গলা কাটা রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে আছে। এরপর পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেন।