ঢাকা , শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আংশিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

Print Friendly, PDF & Email

 

উদ্বোধন করা হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অংশবিশেষ। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেছেন।

 

সকাল ১০ টার একটু পরই তিনি বিমানবন্দরের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে শিশুরা তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এবং এ সময় টার্মিনালে যাত্রীদের কীভাবে সেবা দেওয়া হবে তা দেখানো হয়।

 

 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ”বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই বাংলাদেশই হবে হাব, এক সময় কক্সবাজার বা আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই আমরা এটাকে তৈরি করতে চাচ্ছি।”

 

সরকার প্রধান আরো বলেন, “আমরা দেখেছি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন হয় যেমন একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব, এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ হাব।”

 

নতুন টার্মিনালটি বিশ্বমানের যাত্রী সেবা দিবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হওয়ার জন্য। টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

 

 

আংশিক উদ্বোধনের পর থেকে এই টার্মিনালের পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহারের সুবিধা পাবেন এয়ারলাইনসগুলো। পুরোনো দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ রাখা যায়। তবে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ।

 

বর্তমানে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা দিচ্ছে। এই হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয় শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল। তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে বলে আশা করেছে বেবিচক। এছাড়া এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে।

 

 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে।

 

৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে থাকবে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং অন্যান্য উড়োজাহাজ এটি ব্যবহার করতে পারে। নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ করা হবে যা বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিবে। টার্মিনালটির ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের জন্য।

 

 

বর্তমানে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ম্যানুয়াল সিকিউরিটি চেক করা হলেও এখানে থাকবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা চেকের মাধ্যমে বিমানে না ওঠা পর্যন্ত স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া। এবং একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।

 

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন। এখন পর্যন্ত টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। যার বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা এবং বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান। এবং এর নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

 

 

এছাড়া থাকবে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া জন্য মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভূগর্ভস্থ টানেল ও ফ্লাইওভার। যা যাত্রীদের দিবে যানজট বিহীন এক আরামদায়ক যাত্রা।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মুফিদুর রহমান, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ প্রকল্প কাজের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল আংশিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

আপডেট: ১২:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ অক্টোবর ২০২৩
Print Friendly, PDF & Email

 

উদ্বোধন করা হলো হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের অংশবিশেষ। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

শনিবার (৭ অক্টোবর) দুপুর ১২টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী এই টার্মিনালের উদ্বোধন করেছেন।

 

সকাল ১০ টার একটু পরই তিনি বিমানবন্দরের অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে শিশুরা তাকে স্বাগত জানায়। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। এবং এ সময় টার্মিনালে যাত্রীদের কীভাবে সেবা দেওয়া হবে তা দেখানো হয়।

 

 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ”বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এই বাংলাদেশই হবে হাব, এক সময় কক্সবাজার বা আমাদের হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহনের হাব। আমরা বিশ্বাস করি এবং সেভাবেই আমরা এটাকে তৈরি করতে চাচ্ছি।”

 

সরকার প্রধান আরো বলেন, “আমরা দেখেছি পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় কিছু পরিবর্তন হয় যেমন একসময় হংকং ছিল আন্তর্জাতিক হাব, এরপর হলো সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এখন দুবাই। আমি বিশ্বাস করি পূর্ব ও পশ্চিমের আকাশ পথের মধ্যবর্তী হওয়ায় এক সময় আমাদের কক্সবাজার বা হজরত শাহজালাল হবে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণ হাব।”

 

নতুন টার্মিনালটি বিশ্বমানের যাত্রী সেবা দিবে বলে আশা করেছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি চালু হওয়ার জন্য। টার্মিনাল অপারেশনে ব্যবহৃত সরঞ্জামের প্রয়োজনীয় ক্যালিব্রেশন এবং প্রস্তুতির কারণে এই সময়ের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন বেবিচক চেয়ারম্যান।

 

 

আংশিক উদ্বোধনের পর থেকে এই টার্মিনালের পার্কিং অ্যাপ্রোন ও ট্যাক্সিওয়ে ব্যবহারের সুবিধা পাবেন এয়ারলাইনসগুলো। পুরোনো দুটি টার্মিনালের অ্যাপ্রোনে বর্তমানে ২৯টি উড়োজাহাজ রাখা যায়। তবে পাঁচ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার আয়তনের টার্মিনালটি পুরোপুরি চালু হলে একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ।

 

বর্তমানে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল এখন প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ হাজার যাত্রী সেবা দিচ্ছে। এই হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেয় শাহজালাল বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল। তৃতীয় টার্মিনাল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর বছরে অতিরিক্ত ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিতে পারবে বলে আশা করেছে বেবিচক। এছাড়া এই টার্মিনালে ১ হাজার ৪৪টি গাড়ি রাখার সক্ষমতাসহ বহুতল গাড়ি পার্কিং তৈরি করা হচ্ছে।

 

 

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) বলছে, নতুন টার্মিনালে ব্যাগেজ হ্যান্ডলিং সিস্টেম, অ্যারাইভাল লাউঞ্জ, ক্যান্টিনা, ডিউটি ফ্রি শপ ও বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। এ ছাড়া তৃতীয় টার্মিনালে ১৬টি ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে এবং অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট থাকবে।

 

৪১ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জুড়ে দুটি এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে থাকবে, যাতে কোনো উড়োজাহাজ অবতরণের পর দ্রুত রানওয়ে ছেড়ে যেতে পারে এবং অন্যান্য উড়োজাহাজ এটি ব্যবহার করতে পারে। নতুন টার্মিনালে ট্রানজিট যাত্রীদের জন্য একটি বড় লাউঞ্জ করা হবে যা বছরে ৪০ লাখ যাত্রীকে সেবা দিবে। টার্মিনালটির ৩ হাজার ৬৫০ বর্গমিটার এলাকা থাকবে ভিআইপি যাত্রীদের জন্য।

 

 

বর্তমানে যাত্রীদের বিমানবন্দরে ম্যানুয়াল সিকিউরিটি চেক করা হলেও এখানে থাকবে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় সুরক্ষা চেকের মাধ্যমে বিমানে না ওঠা পর্যন্ত স্ক্রিনিং প্রক্রিয়া। এবং একটি করিডরের মাধ্যমে পুরোনো দুটি টার্মিনালের সঙ্গে নতুন টার্মিনালকে যুক্ত করা হবে।

 

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন। এখন পর্যন্ত টার্মিনালের প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিনের নকশায় এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। যার বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা এবং বাকি ১৬ হাজার ১৪১ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং কাজ পেতে যাচ্ছে জাপান। এবং এর নির্মাণকাজ করছে জাপানের মিৎসুবিশি, ফুজিটা ও দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং।

 

 

এছাড়া থাকবে যাত্রীদের নির্বিঘ্নে বিমানবন্দরে আসা-যাওয়া জন্য মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ ভূগর্ভস্থ টানেল ও ফ্লাইওভার। যা যাত্রীদের দিবে যানজট বিহীন এক আরামদায়ক যাত্রা।

 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) সুকেশ কুমার সরকার, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মুফিদুর রহমান, বেবিচকের প্রধান প্রকৌশলী আবদুল মালেক, বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলামসহ প্রকল্প কাজের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।