উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ায় ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যায় রাজবাড়ী জেলার দুই প্রবাসীর মৃত্যু হয়েছে।
মৃতরা হলেন- রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের হাবাসপুর গ্রামের আরশেদ প্রামাণিকের ছেলে শাহিন প্রামাণিক (৩৫) ও একই উপজেলার যশাই ইউনিয়নের ধোপাকেল্লা গ্রামের মৃত দুলাল খানের ছেলে সুজন খান (২৫)।
নিহত শাহিনের স্বজনেরা গণমাধ্যমকে জানান, শাহিন প্রায় ১২-১৩ বছর লিবিয়ায় ছিল। লিবিয়ায় থাকা অবস্থায় সে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিয়ে করে। ২০২০ সালে সে দেশে আসে। দেশে আসার পর তার এক ছেলে সন্তান হয়। ওই ছেলের বর্তমান বয়স প্রায় দুই বছর। ১০ মাস আগে সে স্ত্রীকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় রেখে আবারও লিবিয়ায় চলে যায়। সে লিবিয়ায় যাবার পর তার আরও একটি ছেলে সন্তান হয়। এই সন্তানের বর্তমান বয়স ৬ মাস।
সবশেষ গত রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে শাহিনের কথা হয়। শাহিনের বড় ভাই জামাল প্রামাণিকও লিবিয়ায় থাকে। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে জামাল বাড়িতে ফোন করে জানায় শাহিন ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে মারা গেছে। তাকে লিবিয়াতেই দাফন করা হয়েছে।
নিহত অপর যুবক সুজনের বড় ভাই জুবায়ের খান বলেন, আমরা চার ভাইবোন। সুজন আমার ছোট। ২০০৯ সালে সুজনকে ছোট রেখে আমার বাবা মারা যান। এরপর থেকে আমি বাবার রেখে যাওয়া জমিতে কৃষিকাজ করে সুজনকে এসএসসি পাস করাই। পরে ধারদেনা করে ৪ লাখ টাকা খরচ করে ২০১৯ সালে সুজনকে লিবিয়া পাঠাই। লিবিয়ায় যাওয়ার পর সেখানে সুজন একটি ব্যংকে অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করতো। তিন বছর ভালোভাবেই কাজকর্ম করে বাড়িতে টাকা পাঠাতো। হঠাৎই লিবিয়া থেকে সে ইতালি যেতে গিয়ে দালাল চক্রের খপ্পড়ে পড়ে। দালালরা তাকে গেম ঘরে আটকে রেখে মুক্তিপণের জন্য নির্যাতন চালাতো। আমরা বাড়ি থেকে জমিজমা বিক্রি করে কয়েক ধাপে ২৩ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে তাকে গেম ঘর থেকে মুক্ত করি। এরপর সে আবারও ব্যংকের কাজে যোগ দেয়। পাশাপাশি সে রঙ মিস্ত্রির কাজও করতো।
সবশেষ গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টার দিকে তার সঙ্গে আমাদের কথা হয়। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে লিবিয়া প্রবাসী আমার মামাতো ভাই হাসান ফোন করে জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে বিল্ডিংয়ের ছাদ ধ্বসে চাপা পড়ে সুজন মারা গেছে। তার মরদেহ নাকি সেখানেই দাফন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার ভাইটা মারা যাওয়াতে আমাদের পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গেল। আমাদের সহায়-সম্বল সবকিছু ওর পেছনেই খরচ করে ফেলেছি। ওই ছিল আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র সম্বল।
লিবিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সবশেষ তথ্য বলছে, এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় ড্যানিয়েলের তান্ডবে লিবিয়ার দারনা শহরে বসবাসরত ৬ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ৪ জনের প্রাথমিক পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- রাজবাড়ী জেলার শাহিন প্রামাণিক ও সুজন খান এবং নারায়ণগঞ্জ জেলার মামুন ও শিহাব। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত বাকি ২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়া দারনা শহরে বসবাসরত আরও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি নিখোঁজ থাকার আশঙ্কার কথা জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।