কানাডায় দুর্বৃত্তদের হামলায় শরীফ রহমান (৪৪) নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। তিনি বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ ‘দ্য কারি হাউজ’ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেট ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বটেশ্বর এলাকায়।
গেল শুক্রবার (২৫ আগস্ট) স্থানীয় সময় সকালে অন্টারিওর লন্ডন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এর আগে ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় টরন্টো থেকে ১৯০ কিলোমিটার দূরে ওয়েনসাউন্ডে ডাউন টাউনের প্রাণকেন্দ্র সেকেন্ড এভিনিউ ইস্ট এবং টেন্থ স্ট্রিটের কর্ণারে অবস্থিত তার রেস্টুরন্টের বাইরে ৩ বন্দুকধারী আক্রমণ করে শরীফ রহমানকে।
এরপর মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে নিকটস্থ লন্ডন হাসপাতালে নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হলেও জ্ঞান ফিরেনি তার। সেই থেকে সেখানকার লন্ডন হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। তবে ২৫ আগস্ট শুক্রবার সকালে তিনি অচেতন অবস্থায়ই হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন বলে জানান তদন্ত কর্মকর্তারা।
এ ঘটনায় স্থানীয় সিটি মেয়র ‘আইয়ান বোডি’ এক শোকবার্তায় জানায়, “শরিফ ছিলেন আমাদের কম্যুনিটির বিশেষ ব্যক্তিত্বের অধিকারি একজন সদস্য। সিটি এবং কাউন্টির বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে তার অবদান অনস্বীকার্য। পারিবারিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত শরিফ উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ী হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করেছেন।
শরিফের মৃত্যু সংবাদ জেনে এলাকার শতশত শোকার্ত মানুষ রেস্টুরেন্টের সামনে জড়ো হয়ে দুর্ঘটনার স্থানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণের পাশাপাশি দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তদন্ত কর্মকর্তারা শুক্রবার রাতে জানান, আশপাশের সিসিটিভি পরীক্ষার পর ৩ দুর্বৃত্তের ছবি উদঘাটন করা সম্ভব হলেও তাৎক্ষণিকভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শরিফের ভাই আনিস জানান, কেন তাকে হত্যা করা হলো তা এখনও বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ, তিনি সবসময়ই অন্যের কল্যাণে নিবেদিত ছিলেন।
শরিফ ৮ বছর আগে ক্রয় করেছিলেন ‘দ্য কারি হাউজ’ রেস্টুরেন্ট। এর মাধ্যমে শরিফ এলাকাবাসীর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রচনায় সক্ষম হয়েছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সিটি মেয়র আইয়ান বোডি সোমবার পর্যন্ত শরিফের বিদেহি আত্মার প্রতি সম্মান এবং তার স্ত্রী শায়লা রহমান ও সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জানাতে সিটিসহ সকল অফিসের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
নিহত শরীফের বাড়ি সিলেট ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন বটেশ্বর এলাকায়। তিনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে লন্ডনের গ্লাসগো ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম ফিল সম্পন্ন করেন। এরপর কানাডায় পাড়ি দিয়ে ২০১৫ সালে রেস্তোরাঁর ব্যবসা শুরু করেন শরিফ।
এদিকে, সন্দেহভাজন দুজনের ছবি প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে শরিফের মরদেহ। তার স্ত্রীর নাম শায়েলা। এ দম্পতির সাত বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে।