রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে সৌদি আরব প্রবাসীর পরিবারের অভিযোগের পর দেশটিতে থাকা কর্মীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গেল বুধবার ( ২৪ মে) বিজিএল ওভারসিস লিমিটেড (আর. এল. নম্বর ২০১৭) নামের রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সৌদি প্রবাসীর লিখিত অভিযোগ নিয়ে প্রবাস বার্তায় সংবাদ প্রচার করা হয় এর পর বেড়িয়ে আসছে এজেন্সিটির নানা অনিয়ম। প্রতিবেদনটির কমেন্টে অনেকেই রিক্রুটিং এজেন্সির নামে প্রতারণার অভিযোগ করেন অনেকেই ইমেইল করেও তাদের ওপর নির্যাতন ও প্রতারণার কথা জানান এমন বেশ কিছু অভিযোগের তথ্য ও প্রমাণ এসেছে প্রবাস বার্তার কাছে
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টাইমস লিমিটেড কোম্পানী নামে সৌদি আরবে বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের নির্মম নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে তখন সংবাদ প্রচারের পর প্রতিষ্ঠানের মালিক সুজন ইব্রাহিম ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ক্ষমা চান
অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশের একটি রিক্রুটিং এজেন্সি বিজিএল ওভারসিস লিমিটেড কর্মীদের বিভিন্ন ধরণের মিথ্যা আশা দিয়ে সৌদি আরবে পাঠিয়ে সঠিক কাজ দিচ্ছে না আকামা করেও দেয়নি অনেক কর্মীকে বেকার বসিয়ে রাখা, হয়রানি এমনকি মারধরের মতো অভিযোগ উঠেছে। দেশটির রাজধানী রিয়াদের আল ইয়ামামা এলাকায় একটি ভিলাতেই গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে অন্তত ১৮০ কর্মীকে
আরো বেশি নির্যাতনের ভয়ে কর্মীদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হচ্ছে না কয়েকজন সৌদি প্রবাসী জানায়, বিজিএল ওভারসিস লিমিটেডের রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণা নিয়ে প্রবাস বার্তায় প্রতিবেদন প্রকাশ হলে, সেই প্রতিবেদনের মন্তব্যের ঘরে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম ও তাদের কষ্টের কথা জানান বেশ কয়েকজন। যাদের সবাই এজেন্সিটির মাধ্যমে ২ মাস আগে সৌদিতে গিয়েছিলেন। কর্মীরা জানান, সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করায় তাদের চিহ্নিত করে রড দিয়ে মারধর করা হয়। এমনকি কয়েকজনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রবাসী বলেন, “ভিডিও প্রতিবেদনের নিচে এজেন্সির অনিয়মের বিরুদ্ধে কমেন্টস করায় কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে এবং তাদের সবার মোবাইল নিয়ে গেছে। এসময় সৌদিতে সোহাগ নামে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির এক কর্মকর্তা এই কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “বাংলাদেশে যাইয়া তোরা কি করবি? দেশে যাইয়া প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ে আমার নামে মামলা দিবি? কোন সমস্যা নাই, মামলা দে গা । আমি তোগো ২০০ জনের টাকা যদি তাগো (মন্ত্রণালয়ে) মুখ পেইচ্যা ফিক্কা দেই, সব কিছু ঠিক হইয়া যাইবো।” এই কথা শুনার পর সবাই আতঙ্কে আছে বলে জানান ওই প্রবাসী।
এছাড়াও আরো ৪০ থেকে ৪৫ জন সৌদি প্রবাসী জানান, তারা বিজিএল রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সৌদিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। সৌদিতে যাওয়ার পর তাদের কাছ থেকে পাসপোর্ট নিয়ে গেছে রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজন। কাজ না দিয়ে বেকার বসিয়ে রাখা হয়েছে তাদের। কাজের কথা বললেই মারধর করা হয়। তাদের এমন পরিবেশে রাখা হয়েছে যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয় বলে জানান এই প্রবাসী কর্মীরা।
কর্মীরা বলেন, “এখানে আমরা কয়েকশ বাংলাদেশি আছি, যারা সবাই বি জি এল এর মাধ্যেমে সৌদিতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। গেল ২মাস থাকা খাওয়ার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাদের বাঁচান, আমরা দেশে ফিরে যেতে চাই।”
কর্মীদের এমন অভিযোগের বিষয়ে রিক্রুটিং এজেন্সিটির বক্তব্য জানতে বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেদওয়ান আহমেদকে মোবাইল ফোনে কল করা হয় তিনি রিসিভ করেননি এছাড়া তার ওয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোন জাবাব দেননি
এবিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো- বিএমইটি’র মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসি প্রবাস বার্তাকে জানান, এ ধরণের অনিয়ম কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না এর বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে মন্ত্রণালয় থেকে অভিযোগটি বিএমইটিতে আসলেই এবিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে
এর আগে গেল ২৪ মে ওই রিক্রুটিং এজেন্সির অনিয়ম ও প্রতারিত হওয়ার বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন সৌদি প্রবাসী মো: খালেক মিয়া। এরপর প্রবাস বার্তায় এ নিয়ে খবর প্রচার হলে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয় সংশ্লিষ্ট মহলে।