দেশে রেমিট্যান্সের পরিমান বৃদ্ধি করতে প্রণোদনার পাশাপাশি আরো সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ।
বৃহস্পতিবার (২৫ মে) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ: সুযোগ, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথীর বক্তব্যে একথা বলেন প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।
মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, “দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার অনেক কারণ থাকতে পারে। তবে রেমিট্যান্স সেই সমস্যায় সহায়ক। রেমিট্যান্সে বেশি সুবিধা দিতে পারলে আরো বেশি রেমিট্যান্স আসবে।” সেইসাথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ করা দরকার বলেও জানান প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী।
তিনি আরো বলেন, “দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর সকল পদ্ধতি বাংলাদেশ ব্যাংক আরো সহজ করতে কাজ করতে পারে। মোবাইল ব্যাংকিং লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আরো লাইসেন্স দিয়ে ওপেন মার্কেট তৈরি করা যেতে পারে। এতে প্রবাসী আয় বাড়বে বলে আশা করেন মন্ত্রী ইমরান আহমদ।”
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী আরো বলেন, “প্রণোদনার পাশাপাশি আরো সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। প্রবাসীদের সম্মান দেয়া হয় না। এয়ারপোর্টে তাদের সাথে ভালো ব্যবহার ও সম্মান দেয়া হলে তারা এতে আরো উৎসাহিত হবে।”
ইমরান আহমদ বলেন, গেল (২০২১-২২) অর্থবছরে ১১ থেকে ১২ লাখ কর্মী বিদেশ গিয়েছে। কিন্তু রেমিট্যান্স তেমন বাড়েনি। কোথাও একটা ছিদ্র আছে। সেটাকে খুঁজে বের করতে হবে এবং কালো টাকা কিভাবে কমানো যায় সেদিকে চিন্তা করতে হবে।”
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত এসা ইউসুফ এসা আল দুহাইলান বলেন, ”বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। এখান থেকেই সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে। সৌদিতে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের কাজ হচ্ছে। এর জন্য অনেক দক্ষ কর্মী প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে যদি দক্ষ কর্মী পাঠানো যায় তবে রেমিট্যান্স আরো বৃদ্ধি পাবে।”
তিনি আরো বলেন, ”আমরা বাংলাদেশে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে চাই। কয়েক মাসের মধ্যে আমারা বিনিয়োগ করতে পারবো। দুই দেশের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। প্রতিদিন ৫ হাজারের উপর ভিসা ইস্যু হয় সৌদি দূতবাসে। এটা ১২ হাজার পর্যন্ত উন্নীত করা হবে। সৌদির পক্ষ থেকে কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার টাকা নেয়া হয় না বলেও জানান সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত।”
এসময় বক্তারা বলেন, ‘দক্ষ কর্মী তৈরিতে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া চলবে না। দক্ষ কর্মী তৈরি করতে যা করা দরকার সেটা এখন আমাদের করতে হবে। আমাদের প্রথমত কর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। পাশাপাশি তাদের প্রণোদনা দেয়ার মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব।”
বক্তারা আরো বলেন, ”বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের চাইতে খরচ কম হয়। তবে রেমিট্যান্সের বড় অংক হুন্ডির মাধ্যমে আসে। রেমিট্যান্স এ প্রণোদনা বাড়িয়েও অবৈধ হুন্ডি বন্ধ করা যাচ্ছে না। এর জন্য প্রয়োজন কর্মী বান্ধব হওয়া। কর্মী বান্ধব হলেই বৈধ পথে রেমিট্যান্স এর পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হবে।” এতে হুন্ডি বন্ধ করা সম্ভব না হলেও এর প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে সেমিনার অনুষ্ঠানে মত দেন তারা।
বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাসুদ এ খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন , প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো ( বিএমইটি) মহাপরিচালক মো: শহীদুল আলম এনডিসি, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো: হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট এন্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার, রিফিউজি এন্ড মাইগ্রেটরি রিসার্স ইউনিট রামরু এর চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী, অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশ ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ড. হাবিবুর রহমান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের নন গভর্নমেন্ট এরভাইজর মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী ও বায়রা মহাসচিব হায়দার আলী’সহ খাত সংশ্লিষ্ট আরো অনেকেই।