ঢাকা , শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৬ আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী নারী উদ্যোক্তা জাহিদার নিরলস সংগ্রাম

মালয়েশিয়া প্রবাসী জাহিদা আক্তার রিতা।

Print Friendly, PDF & Email

 

সফলতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে নিত্যদিন ঘরে-বাইরে দেশে-প্রবাসে পুরুষ যেমন নিরলস সংগ্রাম করছে, ঠিক তেমনি স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই নারীরাও।

মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা জাহিদা আক্তার রিতাও সেই সংগ্রামীদের একজন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। বাবার ব্যবসার সুবাদে বেড়ে উঠা রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে। তবে ২০১৭ সালে চার্টার্ড একাউন্টে উচ্চ ডিগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার ম্যাথটিস কলেজে।

জাহিদা আক্তার রিতা ব্যক্তি জীবনে যেমন পরিপাটি তেমনি সৌখীনও বটে। মাঝে মধ্যেই নিজের সুন্দর্য্য পরিপাটি রাখতে যেতেন মালয়েশিয়ান বিউটি পার্লারে। চুল কাটা, ভ্র’প্লাক, নখের কাজ, ফেসিয়ালসহ অনেক কাজই করতে হতো তাকে এবং গুনতে হতো বড় অংকের টাকা। হঠাৎ করেই সে চিন্তা। এমন একটা প্রতিষ্ঠান যদি করা যেত তাহলেতো আর কোন অর্থ প্রদান করতে হবে না। বরং এর পাশাপাশি আয়ের একটা উৎস বের হবে।

মালয়েশিয়ায় রয়েছে বিউটি পার্লারের ব্যাপক চাহিদা। সে থেকেই তার মাথায় চেপে বসে পার্লারের মালিক হওয়ার স্বপ্ন। যেই কাজ সেই উদ্যোগ। শুরু হলো তার জীবন সংগ্রামের যুদ্ধ। নিজের বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সততা ও অদম্য ইচ্ছার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের শিখরে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন বাংলাদেশি এ নারী উদ্যোক্তা। হয়ে ওঠেন প্রবাসী নারীদের সাফল্যের মডেল। তাকে দেখে রীতিমতো অনুপ্রাণিত হন অন্যান্য নারী উদ্যোক্তারাও।

সময়ের পালাক্রমে সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়া জাহিদা আক্তার রিতা জানান, ”ছোট বেলা থেকেই তার একটা চাওয়া ছিলো নিজে উদোক্তা হওয়া। সমাজে যারা অবহেলিত আছে তাদের জন্য কিছু একটা করা।” জাহিদা যখন ঢাকাতে পড়াশোনা করতেন নিজে নিজে বিভিন্ন ড্রেসের ডিজাইন করতেন সেসময় বন্ধুরা বলতো তাদের জন্যও ডিজাইন করে দিতে। তখন থেকেই মূলত তার উদোক্তা হওয়ার ইচ্ছা শুরু হয়।

উচ্চ শিক্ষার জন্য যখন মালয়েশিয়াতে আসার পর ভাবলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করা যায় কিনা তখন এটা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর শুরু হয় গবেষণা।

কোন ব্যাবসা ভালো হবে, কোন কাজে পেরে উঠবে, সব কিছুর পর চিন্তা করলেন যেহেতু তার সাজু গুজু করার সখ আছে, একইসাথে আছে অভিজ্ঞতা তাই চিন্তা করলেন একটা সেলুন শপ দেয়ার। এরপর ছোট ছোট করে পথ চলা শুরু জাহিদার।

তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, যখন মালয়েশিয়াতে আসছিলাম অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। শুরুটা আমার একদমই ভালো ছিলো না। যেমন ভাষাগত সমস্যা আবার এই দেশের নিয়মনীতি আমাদের দেশের থেকে সম্পূর্ন আলাদা। তারপর আমি একটা মেয়ে। আমার আরও বেশি বাধা বিপত্তি নিয়ে আগাতে হয়েছে।

জাহিদা আক্তার রিতা বলেন, “আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে আর দশজন মানুষ যদি পারে আমি কেন পারবো না। এইজন্য আমার কাছে কখনও মনে হয়নি আমি হেরে যাবো। সমস্যা আছে সমাধান ও আছে এবং এটা কিভাবে সমাধান করা যায় সেটাই আমি করতাম। কাষ্টোমারদের সাথে মিশা ও তাদের বিশ্বাস অর্জন করা এবং তাদের মনের মতো সার্ভিস দিয়ে মূলত আমার এই জায়গায় আসা।”

জাহিদা বলেন, “আমার মালয়েশিয়াতে দুইটা সেলুন শপ রয়েছে যেখানে বর্তামানে কাজ করেন, ইন্দ্রোনিশিয়া, ইয়ামেন, ফিলিপিইন, মায়নমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়ান, মালয়েশিয়ান কর্মীরা। আমার এই সেলুন গুলোতে মেয়ে ও ছেলেদের সব ধরনের পার্লারের কাজ করা হয়। যেমন হেয়ার কার্ট, কালার, পরম স্ট্রেইটেনিং, চিকিৎসা, হেয়ার এক্সটেনশন,মেকাপসহ প্রায় চল্লিশ ধরনের কাজ করা হয়। আমার এই দুইটা শপ ছাড়াও পেনাং এ একটা ছোট করে শুরু করেছি এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ঢাকাতেও একটা সেলুন শপ করার চিন্তা ভাবনা আছে কারণ আমি যে কাজ গুলো করি এই কাজের জন্য অনেকেই ইন্ডিয়া, থাইলেন্ড, দুবাই, মালয়েশিয়াতে যায়। কিছু মানুষের বাহিরে গিয়ে এই কাজ গুলো করার সামার্থ আছে কিন্তু সবার আর নাই। এই জন্য আমি যদি একটা সেলুন শপ ঢাকাতে দেই তাহলে অন্য সবাই এই সেবাটা নিতে পারবে। আমি সেলুনের পাশাপাশি আবার এটার উপর প্রশিক্ষন ও দিয়ে থাকি। আমার বেশ কয়েক দেশের ছাত্রীরা আছে যাদের সেলুনের উপর আমি প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি।”

মালয়েশিয়াতে অনেকে বাংলাদেশি মেয়েরা আছে যারা প্রায় সময় সেলুনে যায় বিভিন্ন সাজ গজ করার জন্য। ভিন দেশি ভাষা হওয়ায় অনেকেই বুঝিয়ে বলতে না পারায় তাদের মনের মতো সেবা নিতে পারেন না। সেক্ষত্রে যদি বাংলাদেশি কোন কাষ্টোমার আমার সেলুনে আসে তাহলে কিন্তু এই সমস্যায় তার পরতে হয় না।

সাফল্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ছোটবেলা ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালানোর আর এখন ল্যান্ড ক্লোজার চালাচ্ছি। বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার মা বাবার সহযোগিতার কারণে।”

Tag :
জনপ্রিয়

মালয়েশিয়ায় মৃত্যুদন্ড থেকে রেহাই পেলেন বাংলাদেশি

মালয়েশিয়ায় প্রবাসী নারী উদ্যোক্তা জাহিদার নিরলস সংগ্রাম

আপডেট: ০৮:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ মে ২০২৩
Print Friendly, PDF & Email

 

সফলতা ও অর্থনৈতিক মুক্তির তাগিদে নিত্যদিন ঘরে-বাইরে দেশে-প্রবাসে পুরুষ যেমন নিরলস সংগ্রাম করছে, ঠিক তেমনি স্বাবলম্বী হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে নেই নারীরাও।

মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি নারী উদ্যোক্তা জাহিদা আক্তার রিতাও সেই সংগ্রামীদের একজন। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায়। বাবার ব্যবসার সুবাদে বেড়ে উঠা রাজধানী ঢাকার শ্যামলীতে। তবে ২০১৭ সালে চার্টার্ড একাউন্টে উচ্চ ডিগ্রী লাভের উদ্দেশ্যে নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ার ম্যাথটিস কলেজে।

জাহিদা আক্তার রিতা ব্যক্তি জীবনে যেমন পরিপাটি তেমনি সৌখীনও বটে। মাঝে মধ্যেই নিজের সুন্দর্য্য পরিপাটি রাখতে যেতেন মালয়েশিয়ান বিউটি পার্লারে। চুল কাটা, ভ্র’প্লাক, নখের কাজ, ফেসিয়ালসহ অনেক কাজই করতে হতো তাকে এবং গুনতে হতো বড় অংকের টাকা। হঠাৎ করেই সে চিন্তা। এমন একটা প্রতিষ্ঠান যদি করা যেত তাহলেতো আর কোন অর্থ প্রদান করতে হবে না। বরং এর পাশাপাশি আয়ের একটা উৎস বের হবে।

মালয়েশিয়ায় রয়েছে বিউটি পার্লারের ব্যাপক চাহিদা। সে থেকেই তার মাথায় চেপে বসে পার্লারের মালিক হওয়ার স্বপ্ন। যেই কাজ সেই উদ্যোগ। শুরু হলো তার জীবন সংগ্রামের যুদ্ধ। নিজের বুদ্ধি, সাহস, মনোবল, সততা ও অদম্য ইচ্ছার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রম ধীরে ধীরে তাকে নিয়ে যায় সাফল্যের শিখরে। সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন বাংলাদেশি এ নারী উদ্যোক্তা। হয়ে ওঠেন প্রবাসী নারীদের সাফল্যের মডেল। তাকে দেখে রীতিমতো অনুপ্রাণিত হন অন্যান্য নারী উদ্যোক্তারাও।

সময়ের পালাক্রমে সাফল্যের ছোঁয়া পাওয়া জাহিদা আক্তার রিতা জানান, ”ছোট বেলা থেকেই তার একটা চাওয়া ছিলো নিজে উদোক্তা হওয়া। সমাজে যারা অবহেলিত আছে তাদের জন্য কিছু একটা করা।” জাহিদা যখন ঢাকাতে পড়াশোনা করতেন নিজে নিজে বিভিন্ন ড্রেসের ডিজাইন করতেন সেসময় বন্ধুরা বলতো তাদের জন্যও ডিজাইন করে দিতে। তখন থেকেই মূলত তার উদোক্তা হওয়ার ইচ্ছা শুরু হয়।

উচ্চ শিক্ষার জন্য যখন মালয়েশিয়াতে আসার পর ভাবলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি কিছু করা যায় কিনা তখন এটা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর শুরু হয় গবেষণা।

কোন ব্যাবসা ভালো হবে, কোন কাজে পেরে উঠবে, সব কিছুর পর চিন্তা করলেন যেহেতু তার সাজু গুজু করার সখ আছে, একইসাথে আছে অভিজ্ঞতা তাই চিন্তা করলেন একটা সেলুন শপ দেয়ার। এরপর ছোট ছোট করে পথ চলা শুরু জাহিদার।

তিনি বলেন, “আমি দেখেছি, যখন মালয়েশিয়াতে আসছিলাম অনেকেই অনেক মন্তব্য করেছে। শুরুটা আমার একদমই ভালো ছিলো না। যেমন ভাষাগত সমস্যা আবার এই দেশের নিয়মনীতি আমাদের দেশের থেকে সম্পূর্ন আলাদা। তারপর আমি একটা মেয়ে। আমার আরও বেশি বাধা বিপত্তি নিয়ে আগাতে হয়েছে।

জাহিদা আক্তার রিতা বলেন, “আমার কাছে সব সময় মনে হয়েছে আর দশজন মানুষ যদি পারে আমি কেন পারবো না। এইজন্য আমার কাছে কখনও মনে হয়নি আমি হেরে যাবো। সমস্যা আছে সমাধান ও আছে এবং এটা কিভাবে সমাধান করা যায় সেটাই আমি করতাম। কাষ্টোমারদের সাথে মিশা ও তাদের বিশ্বাস অর্জন করা এবং তাদের মনের মতো সার্ভিস দিয়ে মূলত আমার এই জায়গায় আসা।”

জাহিদা বলেন, “আমার মালয়েশিয়াতে দুইটা সেলুন শপ রয়েছে যেখানে বর্তামানে কাজ করেন, ইন্দ্রোনিশিয়া, ইয়ামেন, ফিলিপিইন, মায়নমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়ান, মালয়েশিয়ান কর্মীরা। আমার এই সেলুন গুলোতে মেয়ে ও ছেলেদের সব ধরনের পার্লারের কাজ করা হয়। যেমন হেয়ার কার্ট, কালার, পরম স্ট্রেইটেনিং, চিকিৎসা, হেয়ার এক্সটেনশন,মেকাপসহ প্রায় চল্লিশ ধরনের কাজ করা হয়। আমার এই দুইটা শপ ছাড়াও পেনাং এ একটা ছোট করে শুরু করেছি এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ঢাকাতেও একটা সেলুন শপ করার চিন্তা ভাবনা আছে কারণ আমি যে কাজ গুলো করি এই কাজের জন্য অনেকেই ইন্ডিয়া, থাইলেন্ড, দুবাই, মালয়েশিয়াতে যায়। কিছু মানুষের বাহিরে গিয়ে এই কাজ গুলো করার সামার্থ আছে কিন্তু সবার আর নাই। এই জন্য আমি যদি একটা সেলুন শপ ঢাকাতে দেই তাহলে অন্য সবাই এই সেবাটা নিতে পারবে। আমি সেলুনের পাশাপাশি আবার এটার উপর প্রশিক্ষন ও দিয়ে থাকি। আমার বেশ কয়েক দেশের ছাত্রীরা আছে যাদের সেলুনের উপর আমি প্রশিক্ষন দিয়ে থাকি।”

মালয়েশিয়াতে অনেকে বাংলাদেশি মেয়েরা আছে যারা প্রায় সময় সেলুনে যায় বিভিন্ন সাজ গজ করার জন্য। ভিন দেশি ভাষা হওয়ায় অনেকেই বুঝিয়ে বলতে না পারায় তাদের মনের মতো সেবা নিতে পারেন না। সেক্ষত্রে যদি বাংলাদেশি কোন কাষ্টোমার আমার সেলুনে আসে তাহলে কিন্তু এই সমস্যায় তার পরতে হয় না।

সাফল্যের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সফলতা সব কিছুতেই পেয়েছি। যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশিই পেয়েছি। ছোটবেলা ইচ্ছে ছিল সাইকেল চালানোর আর এখন ল্যান্ড ক্লোজার চালাচ্ছি। বিদেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছি। সব কিছু সম্ভব হয়েছে আমার মা বাবার সহযোগিতার কারণে।”