ঢাকা , রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বোসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর ভুয়া বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান সরকারিভাবে ফিজিতে কর্মী নিয়োগ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন ভবণ ধস, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ায় নিখোজঁ ৪ বাংলাদেশি আটক, ৩ কর্মীর মৃত্যুতে হাইকমিশনের শোক মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে নিহত তিন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত লিবিয়া থেকে দেশে ফিরল ১৪৩ বাংলাদেশি, অপেক্ষায় আরও ৩২০ জন মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু, নিখোজঁ ৪ প্রথমবারের মত তৈরি হচ্ছে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তথ্যভান্ডার: প্রবাসী কল্যাণ সচিব বিদেশ ফেরত ২ লাখ কর্মী পাবে ২৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষ বন্ধের নির্দেশ দিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম

সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম।

Print Friendly, PDF & Email

 

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের (এজেন্ট) হস্তক্ষেপ বন্ধের পক্ষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি চেয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি কর্মী নিয়োগে এজেন্টদের ব্যবহার বন্ধ করুক।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের কর্মীদের খরচ মাত্র ৩,৭০০ রিঙ্গিত,”। “কিন্তু বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার কর্মীদের বেলায় প্রত্যেকে খরচ করতে হয়, ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ হাজার রিঙ্গিত।” তিনি এই খরচকে “আধুনিক দাসত্বের” সমতুল্য বলেছেন। এ ধরনের স্বীকারোক্তি মালয়েশিয়া সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা বিদেশি কর্মীদের বর্ধিত খরচের জন্য রিক্রুটিং এজেন্টদের ফি-কে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করা হচ্ছে। এজন্য কর্মীদের প্রায়ই উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বা নিয়োগের ফি প্রদানে তাদের ঋণ করতে বা জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য করা হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা অভিবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে অনাকাঙিক্ষত উচ্চ খরচ হওয়াকে দাসত্বের শ্রম বা ফোর্স লেবার এবং মানব পাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই দুটি অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে আমেরিকা ও ইউরোপের মার্কেটে মালয়েশিয়ান পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় হ্যান্ড গ্লোভ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের বর্তমান এবং প্রাক্তন বিদেশি কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ফেরত দিয়ে সে অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কেননা কোম্পানি ও কর্মী উভয়ই এই উচ্চ খরচের পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বাংলাদেশ ও নেপালের সরকারের সাথে অভিবাসন খরচ ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। কিভাবে সহজ পদ্ধতি ও নাম মাত্র খরচে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তারা নাম মাত্র বা জিরো খরচে কর্মী নিয়োগ করার ইচ্ছা বিভিন্ন সময় সরকারকে বলেছে। তারা নিশ্চয়তা চেয়েছে যে, উৎস দেশে ( বাংলাদেশে) কর্মীর অতিরিক্ত কোন খরচ হবে না।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান নিয়োগকর্তাদের বলেছিলেন, যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চান তারা তৃতীয় পক্ষের নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে না করে সরাসরি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে। সে সময় সারাভানান বলেছিলেন, নিয়োগকারী সংস্থাগুলির করা আবেদনগুলি অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা হবে। ২০১৮ সালে, তৎকালীন মানব সম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারন বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় নিয়োগকারী এজেন্টদের ভূমিকা পর্যালোচনা করবে।

কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাথে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রত্যাবর্তন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। মালয়েশিয়া যেখানে উভয় দেশের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীর কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে যেটা জি টু জি প্লাসের সময় কেবল বাংলাদেশ প্রান্তে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সীর কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। জি টু জি প্লাসের সময় মাত্র ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করেছে। এবার শ-খানেক রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করছে কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই সমঝোতা স্মারকে উল্লিখিত উভয় দেশের সম্মতিতে করা অভিবাসন খরচের সীমানা অতিক্রম করেছে।

কোন সরকারই এর লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। বরং বর্তমানে অধিক অভিবাসন খরচের মাত্রা জি টু জি প্লাসের সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে। এবারও সরকারকে ফাঁকি দিয়ে লাগামহীন খরচ আদায় করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী আগমনের পরিমাণ নেপালের তুলনায় খুবই কম। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা অধিক খরচের কর্মী এনে দাসত্বের শ্রম বা জোর জবরদস্তির শ্রম, মানব পাচার এবং অর্থ ফেরত প্রেরণের দায় গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। এমনকি খরচের অর্থ ফেরত পেতে অনেক কারখানার বাংলাদেশী কর্মীদের অসন্তোষের ঘটনার কারনে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা, অতিরিক্ত খরচের খড়গ হতে কর্মীরা রেহাই পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়া মর্যাদাবান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

Tag :

বোসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর ভুয়া বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষ বন্ধের নির্দেশ দিলেন আনোয়ার ইব্রাহিম

আপডেট: ০৪:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Print Friendly, PDF & Email

 

বিদেশি কর্মী নিয়োগে তৃতীয় পক্ষের (এজেন্ট) হস্তক্ষেপ বন্ধের পক্ষে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। তিনি চেয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশি কর্মী নিয়োগে এজেন্টদের ব্যবহার বন্ধ করুক।

বুধবার (৮ জানুয়ারি) মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী হিসেবে আসতে নেপালের কর্মীদের খরচ মাত্র ৩,৭০০ রিঙ্গিত,”। “কিন্তু বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়ার কর্মীদের বেলায় প্রত্যেকে খরচ করতে হয়, ২০,০০০ থেকে ২৫,০০০ হাজার রিঙ্গিত।” তিনি এই খরচকে “আধুনিক দাসত্বের” সমতুল্য বলেছেন। এ ধরনের স্বীকারোক্তি মালয়েশিয়া সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে আসা বিদেশি কর্মীদের বর্ধিত খরচের জন্য রিক্রুটিং এজেন্টদের ফি-কে দীর্ঘদিন ধরে দায়ী করা হচ্ছে। এজন্য কর্মীদের প্রায়ই উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বা নিয়োগের ফি প্রদানে তাদের ঋণ করতে বা জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য করা হয়।

আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা অভিবাসী কর্মীদের বিদেশ যেতে অনাকাঙিক্ষত উচ্চ খরচ হওয়াকে দাসত্বের শ্রম বা ফোর্স লেবার এবং মানব পাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই দুটি অভিযোগে মালয়েশিয়া থেকে আমেরিকা ও ইউরোপের মার্কেটে মালয়েশিয়ান পণ্য প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বেশ কয়েকটি স্থানীয় হ্যান্ড গ্লোভ প্রস্তুতকারক কোম্পানি তাদের বর্তমান এবং প্রাক্তন বিদেশি কর্মীদের অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ ফেরত দিয়ে সে অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে পেরেছে। কেননা কোম্পানি ও কর্মী উভয়ই এই উচ্চ খরচের পদ্ধতি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসুসন ইসমাইল বাংলাদেশ ও নেপালের সরকারের সাথে অভিবাসন খরচ ও প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। কিভাবে সহজ পদ্ধতি ও নাম মাত্র খরচে কর্মী নিয়োগ করতে পারেন। মালয়েশিয়ান নিয়োগকর্তারা নাম মাত্র বা জিরো খরচে কর্মী নিয়োগ করার ইচ্ছা বিভিন্ন সময় সরকারকে বলেছে। তারা নিশ্চয়তা চেয়েছে যে, উৎস দেশে ( বাংলাদেশে) কর্মীর অতিরিক্ত কোন খরচ হবে না।

মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মী।

উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান নিয়োগকর্তাদের বলেছিলেন, যারা বিদেশি কর্মী নিয়োগ করতে চান তারা তৃতীয় পক্ষের নিয়োগ সংস্থার মাধ্যমে না করে সরাসরি মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে। সে সময় সারাভানান বলেছিলেন, নিয়োগকারী সংস্থাগুলির করা আবেদনগুলি অবিলম্বে প্রত্যাখ্যান করা হবে। ২০১৮ সালে, তৎকালীন মানব সম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারন বলেছিলেন, মন্ত্রণালয় নিয়োগকারী এজেন্টদের ভূমিকা পর্যালোচনা করবে।

কিন্তু সর্বশেষ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সাথে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান ও প্রত্যাবর্তন বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। মালয়েশিয়া যেখানে উভয় দেশের বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সীর কাজ করার সুযোগ রাখা হয়েছে যেটা জি টু জি প্লাসের সময় কেবল বাংলাদেশ প্রান্তে বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সীর কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। জি টু জি প্লাসের সময় মাত্র ১০টি বাংলাদেশি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করেছে। এবার শ-খানেক রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী প্রেরণ করছে কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই সমঝোতা স্মারকে উল্লিখিত উভয় দেশের সম্মতিতে করা অভিবাসন খরচের সীমানা অতিক্রম করেছে।

কোন সরকারই এর লাগাম টেনে ধরতে পারেনি। বরং বর্তমানে অধিক অভিবাসন খরচের মাত্রা জি টু জি প্লাসের সময়কেও ছাড়িয়ে গেছে। এবারও সরকারকে ফাঁকি দিয়ে লাগামহীন খরচ আদায় করা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় কর্মী আগমনের পরিমাণ নেপালের তুলনায় খুবই কম। মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা অধিক খরচের কর্মী এনে দাসত্বের শ্রম বা জোর জবরদস্তির শ্রম, মানব পাচার এবং অর্থ ফেরত প্রেরণের দায় গ্রহণ করতে ইচ্ছুক নয়। এমনকি খরচের অর্থ ফেরত পেতে অনেক কারখানার বাংলাদেশী কর্মীদের অসন্তোষের ঘটনার কারনে, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণা, অতিরিক্ত খরচের খড়গ হতে কর্মীরা রেহাই পাবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে মালয়েশিয়া মর্যাদাবান হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।