মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস- বায়রা’র মহাসচিব গণমাধ্যমে মনগড়া ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা। মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমোদিত একাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক বলেন, দেশের বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি পূরণে এই শ্রমবাজারটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই দায়িত্বশীল কারো কাছ থেকে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার হলে বাজারটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে
শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেল একাত্তর টিভির সংবাদ ভিত্তিক এক অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে কথা বলেন বায়রার বর্তমান মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান। সেখানে তিনি বলেছেন, “মালয়েশিয়া সরকার এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৯০ হাজারের মতো কর্মী চাহিদা অনুমোদন দিয়েছে। এই সময়ে দেশটিতে মাত্র ২১ থেকে ২৫ হাজারের মতো কর্মী গিয়েছে। কর্মী পাঠানোর এই ধীর গতির কারণে অন্য দেশগুলো সুযোগ নিচ্ছে।”
এই অনুষ্ঠানের ভিডিও রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই সমালোচনা করেন। সামাজিক মাধ্যমে তারা সমালোচনা করে বলেন, দায়িত্বশীল একটি সংগঠনের মহাসচিব হিসেবে গণমাধ্যমে অসত্য তথ্য দেয়ায় বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এতে করে এই সেক্টরের ক্ষতি হচ্ছে
বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৪৬ হাজার ২০১ জন কর্মী মালয়েশিয়া গেছে। এই সময়ে মালয়েশিয়া থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে দেয়া বায়রার বর্তমান মহাসচিবের তথ্য অসত্য মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে আগস্টে কিন্তু তিনি (বর্তমান মহাসচিব) বলেছেন জুনে কর্মী যাওয়া শুরু হয়েছে, যা সঠিক নয়
তিনি বলেন, একটি মহল শুরু থেকেই মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে অসত্য তথ্য প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। শুধু তাই নয় বিভিন্ন ফোরামে ও গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে নানা অবাস্তব কথা বলে এই বাজার খোলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এই বাজারটি যখন স্বাভাবিক গতিতে চলছে, তখন নানা অসত্য ও বানোয়াট কথা বলে এই খাতের ক্ষতি করছে। এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান বায়রার সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন স্বপন।
এদিকে, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটি এবং মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের ভিসা ইস্যুতে সহযোগিতা করা প্রতিষ্ঠান এমইএফসি থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত মালয়েশিয়া থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্র অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কলিং ভিসা ইস্যু করা হয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮০ হাজার ৯৩১ টি ই-ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মালয়েশিয়াগামী ৫৬ হাজার ৪০১ জন কর্মীর অনুকূলে ছাড়পত্র বা ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স দিয়েছে বিএমইটি আর মালয়েশিয়া গেছে ৪৬ হাজার ২০১ জন কর্মী।
মালয়েশিয়ার অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক ও বায়রার সাবেক নেতা কে এম মোবারাক উল্লাহ শিমুল বলেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর স্বভাবিক গতিকে ব্যাহত করতেই বায়রার মহাসচিব এই বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, গেল বছরের ৮ আগস্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া শুরু হতে এখন পর্যন্ত দেশটিতে কর্মী গিয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। অথচ সংবাদ মাধ্যমে বায়রা মহাসচিবের ২১ থেকে ২৫ হাজার কর্মী প্রেরণের তথ্য দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি মনে করেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর গতি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতেই অসত্য তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। বায়রার সাবেক এই নেতা বলেন, বায়রার মত একটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়
২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতা স্মারক সই করে। এর আওতায় ২০২২ সালের ৮ আগস্ট থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় দেশটিতে। এর আগে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ ছিল দেশটিতে কর্মী যাওয়া