সৌদি আরব প্রবাসীর চার এতিম সন্তান ঢাকায় সরকারি শিশু পরিবারে ভালো আছে। তেজগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের এই সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, তিন বোন ও এক ভাইকে বড় একটি কক্ষে পারিবারিক পরিবেশে রাখা হয়েছে। আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দে সময় কাটাচ্ছে তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে এতিম জমিলা ও তার তিন ভাই বোনের খোঁজ নিতে সমাজসেবা অধিদফতর পরিচালিত তেজগাঁওয়ের সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে আসেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মুশাররাত জেবিন। বাবা-মা হাঁরা এই সন্তানদের জন্য নিয়ে আসেন শীত বস্ত্র। আর নিজ হাতে সেগুলো পড়িয়ে দেন এই এতিম শিশুদের
এসময় মুশাররাত জেবিন বলেন, এরা কেমন আছে? কোন পরিবেশে আছে? সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর নিতেই আসা হয়েছে এখানে। তবে সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রের সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ এবং ওদের চার ভাই বোনের স্বাচ্ছন্দে সময় কাটাতে দেখে ভালো লাগছে বলেও জানান তিনি।
এসময় তিনি আরো জানান, ভবিষ্যতে যদি এদের কোনো আত্মীয় তাদের দায়িত্ব নিতে চায়, তাহলে শুরুতেই এদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। আর এ বিষয়ে সার্বিক সহায়তা দিবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রের উপ তত্ত্বাবধায়ক ঝর্না জাহিন বলেন, সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে থাকা অন্যান্যদের মতো সার্বিক নিরাপত্তা ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছে এদের। তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি মৌসুমি ফল, শীতের পিঠা কিংবা নাস্তাও দেয়া হচ্ছে তাদের। আছে খেলাধুলার ব্যবস্থা। সবকিছু মিলে তারা এখানে অনেক আনন্দ ও স্বাচ্ছন্দে সময় কাটাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, ছোট ভাই মুজাহিদ কিংবা ছোট দুই বোন সামিয়া এবং ইয়াসমিনের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিক ও যত্নশীল বড় বোন জমিলা। তার বয়স কম হলেও মায়ের মতোই ওদের সব খোঁজ খবর রাখে সে। আর তার ছোট ভাই মুজাহিদ খুব ভালো ক্যারাম এবং দাবা খেলতে পারে। তিনি বলেন, যদি তাদের কোনো আত্মীয় তাদেরকে কক্সবাজার দাদার বাড়িতে ফিড়িয়ে নিতে প্রস্তাব দেয় এবং এরা যদি সেখানে যেতে চায় তাহলে যথাযথ নিয়মেই তাদের জন্য সেই ব্যবস্থা করা হবে।
এদিকে বড় বোন জমিলা জানান, সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে তারা ভালো আছেন। সবাই তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করছে এবং খোঁজ খবর রাখছে। তবে ছোট ভাই-বোনদের লেখাপড়া ও স্থায়ী ঠিকানার জন্য ফিরে যেতে চান দাদার বাড়ি কক্সবাজারে।
অপরদিকে অর্থনৈতিক ভাবে খুব একটা স্বচ্ছল না হলেও রক্তের বাধন এই এতিম চার সন্তানের দায়িত্ব নিতে চান তাদের ফুফু ও ফুফাত ভাই। আর এই খাতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, রাষ্ট্রীয়ভাবে এদের লালন পালন করা হলেও পিতৃ পরিচয় রেখেই তাদের মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা দরকার।
গেল ৭ জানুয়ারি সকালে সৌদি থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছায় এতিম এই চার সন্তান। ইন্দোনেশিয়ান মা ও বাংলাদেশি বাবার ঘরে এই চার সন্তানের জন্ম হয় সোউদিতে। ৬ বছর আগে এদের ফেলে রেখে চলে যায় ইন্দোনেশিয়ান মা। আর গেল বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী শারীরিক অসুস্থতার কারনে সৌদিতে মারা যায় এদের বাবা। এরপর ৯ মাস জেদ্দার বাংলাদেশ কন্স্যুলেটের সেফ হোমে ছিলো তারা। সবশেষ ওয়েজ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসে মৃত সৌদি প্রবাসীর এই চার সন্তান।