ঢাকা , রবিবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বোসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর ভুয়া বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান সরকারিভাবে ফিজিতে কর্মী নিয়োগ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি সাংবাদিককে অপহরণের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন ভবণ ধস, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ায় নিখোজঁ ৪ বাংলাদেশি আটক, ৩ কর্মীর মৃত্যুতে হাইকমিশনের শোক মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে নিহত তিন বাংলাদেশির পরিচয় শনাক্ত লিবিয়া থেকে দেশে ফিরল ১৪৩ বাংলাদেশি, অপেক্ষায় আরও ৩২০ জন মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি কর্মীর মৃত্যু, নিখোজঁ ৪ প্রথমবারের মত তৈরি হচ্ছে বিদেশ ফেরত কর্মীদের তথ্যভান্ডার: প্রবাসী কল্যাণ সচিব বিদেশ ফেরত ২ লাখ কর্মী পাবে ২৭০ কোটি টাকা প্রণোদনা

বিদেশি কর্মী নির্ভর মালয়েশিয়ার কর্মসংস্থান আইনে সংশোধন

Print Friendly, PDF & Email

 

অনেক প্রতীক্ষার পর বিদেশি কর্মী নির্ভর মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) আইন সংশোধন করেছে। যা ১লা জানুয়ারি ২০২৩ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ৬০ কে ধারা সংশোধন করে লেবারের ডিরেক্টর জেনারেলের নিকট থেকে পূর্বানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ জন্য নিয়োগকর্তা বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু বাধ্যতামূলক শর্ত রয়েছে; যেমন- এমপ্লয়মেন্ট আইনের সাথে সম্পর্কিত কোন ইস্যু পেন্ডিং থাকা যাবে না। এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধীনে প্রদত্ত কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা, সকসো, মিনিমাম বেতন এবং মিনিমাম আবাসনের শর্ত প্রতিপালন না করার কারণে নিয়োগ কর্তাকে কোন দন্ড আরোপ করলে এবং সে মোতাবেক অবস্থার উন্নয়ন না করলে, মানব পাচার ও জবরদস্তিমূলক শ্রমের জন্য নিয়োগকর্তা শাস্তি পেলে নিয়োগের অনুমতি পাবে না।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে নিয়োগকর্তাদের এবং অবশ্যই কোন পদে বা কোন কাজের জন্য নিয়োগ করবে তা স্পস্ট উল্লেখ করা, কর্মরত স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা, কর্মরত বিদেশী কর্মীর সংখ্যা, কোম্পানির নাম, রেজিস্ট্রেশন নং, কোম্পানির ঠিকানা ও অবস্থান, কোম্পানির যোগাযোগের তথ্যাদি, সেক্টর, কোম্পানি বা ব্যবসা শুরুর তারিখ, কোম্পানির বর্তমান অবস্থা, সকসো নং তথ্য দিতে হবে।

জি টু জি প্লাসের নিয়োগের সময় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইং ডিমান্ড এটেস্টেশন করার পূর্বে সরজমিন নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির উপযুক্ততা নির্নয়ের জন্য যে সব বিষয়াদি যাচাই করেছিল ঠিক সে বিষয়গুলো মালয়েশিয়া সংশোধিত এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধিনে এনেছে।

হাইকমিশনের শক্ত অবস্থানের কারণে জি টু জি প্লাসের সময় তুলনামূলক ভালো এবং শতভাগ কর্মসংস্থান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার সংসদেও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের ইস্যুর ভীড়ে ভালো কর্মসংস্থানের ইস্যুটি চাপা রয়ে গেছে।

উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়াও হাইকমিশন কর্মীর আবাসন, এমপ্লয়মেন্ট লেটার, কর্মঘন্টা, ছুটি (সাপ্তাহিক, মেডিকেল লিভ, স্বদেশ ছুটি), ওভার টাইম সম্পর্কিত তথ্য, বেতন প্রদানের পদ্ধতি (ক্যাশ/কর্মীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে), ট্রান্সপোর্টেশন তথা আবাসন থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত, কর্মী বীমা, মেডিকেল বীমা, দূর্ঘটনা বীমা, কোম্পানির নিজ থেকে চিকিৎসা সুবিধা, খাবার, বিনোদন ইতয়াদি বিষয় যাচাই করেছিল।
এমন কি কোম্পানির পরিচালকের সাক্ষাত এবং লিখিত ঘোষণাও নিয়েছিল যেন বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো থাকে।

উপযুক্ততা না থাকায় অনেক কোম্পানির এটেস্টেশন করেনি এবং পদ্ধতি অনুসরণ না করায় মালয়েশিয়ার বিমান বন্দরে আগত কর্মীকে নিয়োগকর্তা নিজ খরচে ফেরত প্রেরণ করে এবং পুনরায় যথানিয়মে মালয়েশিয়ায় আনয়ন করেছিল। সে সময়ের লেবার কাউন্সেলর সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের কর্মীদের যৌক্তিক এবং নিরাপদ মাইগ্রেশন অর্থাৎ সঠিক কোম্পানিতে কাজ পাওয়া এবং ভালোভাবে থাকার বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জের এবং অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। ফলে অনেক চাপ ও বিরোধিতা এবং নেতিবাচক প্রপাগান্ডা সত্ত্বেও নিয়োগকর্তার ও কোম্পানির অবস্থা যাচাই না করে এটেস্টেশন করা হয়নি। এতে দীর্ঘদিনের কাজ না পাওয়া, অমানবিক অবস্থার শিকার হওয়ার যে দূর্নাম ছিল সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়েছে।“ করোনার আগে মালয়েশিয়ায় আগমনে বিদেশি কর্মীদের উচ্চ অভিবাসন খরচ এবং কর্মীদের মানহীন আবাসনের কারণে আমেরিকা ও ইউরোপ মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্য গ্রহণ না করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।”

আন্তর্জাতিকভাবে এ দুটিকে মানব পাচার এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দুটি অভিযোগ মালয়েশিয়ার উন্নত দেশের স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য মালয়েশিয়া সরকার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং দেশীয় এনজিওদের সাথে কাজ করছে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার আইএলও কনভেনশনে সই করেছে। বর্তমান সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন যে,  বিদেশি কর্মী রিক্রুটমেন্ট (বাছাই), এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) এবং রিপাট্রিয়েশন (দেশে প্রত্যাবর্তন) ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের যৌক্তিক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। উৎস দেশের সরকার, রিক্রুটিং এজেন্সি, মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার সহযোগিতায় দক্ষিণ-দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশটিতে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।

Tag :

বোসেলের মাধ্যমে কর্মী পাঠানোর ভুয়া বিজ্ঞাপন থেকে সাবধান

বিদেশি কর্মী নির্ভর মালয়েশিয়ার কর্মসংস্থান আইনে সংশোধন

আপডেট: ০৯:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৩
Print Friendly, PDF & Email

 

অনেক প্রতীক্ষার পর বিদেশি কর্মী নির্ভর মালয়েশিয়া এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) আইন সংশোধন করেছে। যা ১লা জানুয়ারি ২০২৩ থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনের ৬০ কে ধারা সংশোধন করে লেবারের ডিরেক্টর জেনারেলের নিকট থেকে পূর্বানুমতি গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এ জন্য নিয়োগকর্তা বা নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য কিছু বাধ্যতামূলক শর্ত রয়েছে; যেমন- এমপ্লয়মেন্ট আইনের সাথে সম্পর্কিত কোন ইস্যু পেন্ডিং থাকা যাবে না। এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধীনে প্রদত্ত কোন সিদ্ধান্ত বা আদেশ বা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা, সকসো, মিনিমাম বেতন এবং মিনিমাম আবাসনের শর্ত প্রতিপালন না করার কারণে নিয়োগ কর্তাকে কোন দন্ড আরোপ করলে এবং সে মোতাবেক অবস্থার উন্নয়ন না করলে, মানব পাচার ও জবরদস্তিমূলক শ্রমের জন্য নিয়োগকর্তা শাস্তি পেলে নিয়োগের অনুমতি পাবে না।

বর্তমান আইন অনুযায়ী বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে নিয়োগকর্তাদের এবং অবশ্যই কোন পদে বা কোন কাজের জন্য নিয়োগ করবে তা স্পস্ট উল্লেখ করা, কর্মরত স্থানীয় কর্মীর সংখ্যা, কর্মরত বিদেশী কর্মীর সংখ্যা, কোম্পানির নাম, রেজিস্ট্রেশন নং, কোম্পানির ঠিকানা ও অবস্থান, কোম্পানির যোগাযোগের তথ্যাদি, সেক্টর, কোম্পানি বা ব্যবসা শুরুর তারিখ, কোম্পানির বর্তমান অবস্থা, সকসো নং তথ্য দিতে হবে।

জি টু জি প্লাসের নিয়োগের সময় বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম উইং ডিমান্ড এটেস্টেশন করার পূর্বে সরজমিন নিয়োগকর্তা বা কোম্পানির উপযুক্ততা নির্নয়ের জন্য যে সব বিষয়াদি যাচাই করেছিল ঠিক সে বিষয়গুলো মালয়েশিয়া সংশোধিত এমপ্লয়মেন্ট আইনের অধিনে এনেছে।

হাইকমিশনের শক্ত অবস্থানের কারণে জি টু জি প্লাসের সময় তুলনামূলক ভালো এবং শতভাগ কর্মসংস্থান হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মালয়েশিয়ার সংসদেও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের ইস্যুর ভীড়ে ভালো কর্মসংস্থানের ইস্যুটি চাপা রয়ে গেছে।

উল্লিখিত বিষয়াদি ছাড়াও হাইকমিশন কর্মীর আবাসন, এমপ্লয়মেন্ট লেটার, কর্মঘন্টা, ছুটি (সাপ্তাহিক, মেডিকেল লিভ, স্বদেশ ছুটি), ওভার টাইম সম্পর্কিত তথ্য, বেতন প্রদানের পদ্ধতি (ক্যাশ/কর্মীর নিজস্ব ব্যাংক হিসাব নম্বরে), ট্রান্সপোর্টেশন তথা আবাসন থেকে কর্মস্থলে যাতায়াত, কর্মী বীমা, মেডিকেল বীমা, দূর্ঘটনা বীমা, কোম্পানির নিজ থেকে চিকিৎসা সুবিধা, খাবার, বিনোদন ইতয়াদি বিষয় যাচাই করেছিল।
এমন কি কোম্পানির পরিচালকের সাক্ষাত এবং লিখিত ঘোষণাও নিয়েছিল যেন বাংলাদেশি কর্মীরা ভালো থাকে।

উপযুক্ততা না থাকায় অনেক কোম্পানির এটেস্টেশন করেনি এবং পদ্ধতি অনুসরণ না করায় মালয়েশিয়ার বিমান বন্দরে আগত কর্মীকে নিয়োগকর্তা নিজ খরচে ফেরত প্রেরণ করে এবং পুনরায় যথানিয়মে মালয়েশিয়ায় আনয়ন করেছিল। সে সময়ের লেবার কাউন্সেলর সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোঃ সায়েদুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের কর্মীদের যৌক্তিক এবং নিরাপদ মাইগ্রেশন অর্থাৎ সঠিক কোম্পানিতে কাজ পাওয়া এবং ভালোভাবে থাকার বিষয়টি ছিল চ্যালেঞ্জের এবং অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছিল। ফলে অনেক চাপ ও বিরোধিতা এবং নেতিবাচক প্রপাগান্ডা সত্ত্বেও নিয়োগকর্তার ও কোম্পানির অবস্থা যাচাই না করে এটেস্টেশন করা হয়নি। এতে দীর্ঘদিনের কাজ না পাওয়া, অমানবিক অবস্থার শিকার হওয়ার যে দূর্নাম ছিল সেখান থেকে উত্তরণ ঘটানো সম্ভব হয়েছে।“ করোনার আগে মালয়েশিয়ায় আগমনে বিদেশি কর্মীদের উচ্চ অভিবাসন খরচ এবং কর্মীদের মানহীন আবাসনের কারণে আমেরিকা ও ইউরোপ মালয়েশিয়ায় উৎপাদিত পণ্য গ্রহণ না করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।”

আন্তর্জাতিকভাবে এ দুটিকে মানব পাচার এবং জবরদস্তিমূলক শ্রম অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ দুটি অভিযোগ মালয়েশিয়ার উন্নত দেশের স্বীকৃতি লাভের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। এসব সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য মালয়েশিয়া সরকার জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা এবং দেশীয় এনজিওদের সাথে কাজ করছে। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া সরকার আইএলও কনভেনশনে সই করেছে। বর্তমান সরকার বিদেশি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া অধিকতর সহজ ও সংক্ষিপ্ত করার কাজ করছে।

সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন যে,  বিদেশি কর্মী রিক্রুটমেন্ট (বাছাই), এমপ্লয়মেন্ট (কর্মসংস্থান) এবং রিপাট্রিয়েশন (দেশে প্রত্যাবর্তন) ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের যৌক্তিক পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। উৎস দেশের সরকার, রিক্রুটিং এজেন্সি, মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্সি এবং নিয়োগকর্তার সহযোগিতায় দক্ষিণ-দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশটিতে সুন্দর দৃষ্টান্ত স্থাপিত হবে।