সৌদি থেকে এতিম হয়ে পিতৃভূমিতে ফিরলো বাংলাদেশি চার ভাই-বোন। শারীরিক অসুস্থতার কারনে গেল বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারী মারা যায় বাবা জাহাঙ্গীর আলম। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় জেদ্দা কনস্যুলেটের সেফ হোমে ৮ মাস থাকার পর ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড তাদের দেশে আনলো।
শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এসে পৌছায় তারা। এসময় তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মুশাররাত জেবিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চোধুরী ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট, জেদ্দার প্রথম সচিব মো: আরিফুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
একটু ভালো জীবন জীবীকার তাগীদে বিশ বছর আগে সৌদি পাড়ি দেন জাহাঙ্গীর আলম। এরপর সেখানেই জন্ম হয় তার তিন মেয়ে ও এক ছেলের। সময়ের ব্যবধানে পরিবার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পরেন তিনি। আর ছোট ছোট এই সন্তানেরা যখন মমতা মাখা মায়ের আদরে বেড়ে উঠার কথা তখন সেই মা’ও তাদের ফেলে চলে যায় আরো ৫ বছর আগে। আর গেল বছর বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে শেষ আশ্রয়স্থলটুকুও হারায় এই অবুঝ সন্তানেরা।
জেদ্দার বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব মো: আরিফুজ্জামান জানান, জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুর পর জেদ্দাস্থ তার বাসায় জান কন্স্যুলেট কর্মকর্তারা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন তারা বাংলাদেশি। পরে জেদ্দা কনস্যুলেটের সেফ হোমে নিয়ে আসা হয় তাদের।তারপর সৌদি সরকারের সহযোগিতায় ডিএনএ টেস্ট করে নিশ্চিত হয় যে এই চার শিশু জাহাঙ্গীর আলমের সন্তান। পরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক মুশাররাত জেবিন জানান, প্রাথমিকভাবে জানা যায় এই চার সন্তানের মা একজন ইন্দোনেশিয়ান। প্রায় ৬ বছর আগে তাদের মা তাদের ফেলে রেখে চলে যান। এজন্য বাংলাদেশে অবস্থিত ইন্দোনেশিয়ার অ্যাম্বাসিতেও যোগাযোগ করা হয় এই মায়ের সন্ধানে। কিন্তু তাদের মায়ের খোজ পাওয়া যায়নি। পরে জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামে বাড়িতে যোগাযোগ করে যখন এই সন্তানদের ঘনিষ্ঠ কাউকে পাওয়া যায়নি, তখন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ত্বত্তাবধায়নেই তাদের সৌদি থেকে নিয়ে আসা হয় দেশে। এতে বোর্ডের নির্ধারিত ফান্ড থেকেই অর্থ ব্যয় করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, মৃত জাহাঙ্গীর আলমের সন্তানেরা ওয়ারিশ হিসেবে পৈতৃক কোনো সম্পত্তি পাবে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে। যদি তারা কোনো পাওয়ানা থাকে ওয়ারিশ হিসেবে তাহলে তা তাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে প্রয়জনীয় সহায়তা দিবে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক, মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চোধুরী জানান, আপাতত এই চার সন্তানকে তেজগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সেফহোম ও সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হবে। প্রয়োজনে নেয়া হবে মিরপুরের সরকারি শিশু পরিবার কেন্দ্রে।
জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জাগিরপাড়া গ্রামে। নির্মম এই বাস্তবতায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে যোগাযোগ করা হয় তার আত্মীয়দের সঙ্গে। তবে এতিম এই সন্তানদের দ্বায়িত্ব নেয়নি কেউ। ভাগ্য জোটেনি পৈতৃক ভিটেমাটিও। আর তাই এখন ঠিকানা সমাজসেবা অধিদপ্তরের আশ্রয় কেন্দ্র।
তবে জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে জামিলার (১৩) আশা ফিরে যাবেন দাদা বাড়ির ভিটেমাটিতে। স্বপ্ন ছোট ভাই বোনদের লেখাপড়া শেখাবেন এবং নিজেও লেখা পড়া করবেন। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মাধ্যমে দেশে আসতে পেরে আনন্দ প্রকাশ করেন। এজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানায় জামিলা।
এতিম ৪ ভাই বোনকে বাবার ভিটেয়, নিজের ঠিকানা করে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।