মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর পর প্রথম ৩ মাসে ১৭ হাজারের বেশি কর্মী দেশটিতে গিয়েছে। চলতি বছরের ৮ আগস্ট ৫৩ কর্মীর প্রথম ফ্লাইট মালয়েশিয়া যায়। এপর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত এই কর্মীরা দেশটিতে গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকসহ সরকারি দপ্তরগুলো। এজেন্সি মালিকরা বলছেন, এই সময়ের মধ্যে আরও বেশি কর্মী যাওয়া উচিত ছিল কিন্তু শুরুর দিকে বাংলাদেশ অংশে সিদ্ধান্তহীনতার সুযোগ নিয়ে বেশি কর্মী পাঠিয়েছে নেপাল। এছাড়া অক্টোবরের শেষ দিকে মালয়েশিয়ার অনলাইন পদ্ধতি উন্নয়নের কারণে কিছু দিন ই-ভিসা ইস্যুতে জটিলতা ছিল
গেল বছরের ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে শ্রমবাজার সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর নানা দেনদরবার ও চিঠি চালাচালির পর চলতি বছরের ২ জুন ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠক শেষে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান এবং বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রমবাজার চালুর ঘোষণা দেন। এরপর কারিগরি বিষয় চুড়ান্ত করতেও সময় লাগে আরও দুই মাসের বেশি। সবকিছু ঠিকঠাক করে ৮ আগস্ট প্রথম ফ্লাইট যায় মালয়েশিয়া। তবে দ্বিতীয় ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দুই সপ্তাহ। আর সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে মূলত নিয়মিত ফ্লাইটে কর্মী যাওয়া শুরু হয় দেশটিতে। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কর্মী পাঠানোর গতি এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক নয়।
অনুমোদিত রিক্রুটিং এজেন্সি, জনশক্তি করমসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো – বিএমইটি এবং ঢাকায় মালয়েশিয়ার কর্মী ভিসায় সহায়তা দেয়া প্রতিষ্ঠান এমএফসি’র দেয়া তথ্য মতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় গেছেন ১৭ হাজার ১০০ জন কর্মী এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি কর্মীর চাহিদাপত্র অনুমোদন দিয়েছে দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কল্যাণ উইং থেকে ৯০ হাজার কর্মীর চাহিদাপত্র সত্যায়ন করা হয়েছে এই সময়ে মালয়েশিয়া থেকে কর্মীদের নামে কলিং ভিসা ইস্যু করা হয়েছে ৪১ হাজার আর ঢাকায় মালয়েশিয়ার হাইকমিশন থেকে ই-ভিসা ইস্যু হয়েছে ২২ হাজারের বেশি এছাড়া জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে ২০ হাজারের বেশি
মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের সরকারি সকল দপ্তর থেকেই কাজগুলো দ্রুত করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরও কেন কর্মী যাওয়ার গতি কম? এমন প্রশ্নে প্রথম অনুমোদন পাওয়া ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির একাধিক মালিক এই প্রতিবেদককে জানান, শুরুতে বাংলাদেশ অংশের সিদ্ধান্তহীনতা এবং কারিগড়ি বিষয়ের ব্যবহার অভ্যাস করতেই অনেক সময় চলে গেছে।
মেসার্স আদিব এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস এর কর্ণধার কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, “সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর বাংলাদেশ থেকে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয় এর মধ্যে রিক্রুটিং এজেন্সির কয়েকজন মালিক নানাভাবে এই পদ্ধতি বাধাগ্রস্ত করেন যাতে করে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত নিতেও দেরি হয় এরপর মালয়েশিয়ার সাথে নানা দেনদরবার ও হাইকমিশন থেকে সত্যায়ন পেতে জটিলতাও পুরো কার্যক্রমের ধীরগতির কারণ আর এই সুযোগ নিয়েছে প্রতিবেশি দেশ নেপাল। তারপরও বাংলাদেশ থেকে এখন নিয়মিতই কর্মী পাঠানোর জন্য এজেন্সিগুলো সব ধরণের চেষ্টা করছে”
নিউ এজ ইন্টারন্যাশনাল এর মালিক মোহাম্মদ শওকত হোসেন সিকদার বলেন, “শুরুতে সিদ্ধান্তে বিলম্বের পর ৮ আগস্ট থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় সেপ্টেম্বর থেকে কাজে বেশ গতিও পায় অক্টোবরের শেষ দিকে মালয়েশিয়ার অনলাইন পদ্ধতির আপডেটের কারণে কিছু দিন ই-ভিসা ইস্যুতে জটিলতা ছিল তাই সেই সময়ে কর্মী যাওয়ার গতিও কিছুটা কমে যায় এখন পুরোদমে কর্মী পাঠানোর সব কাজ চলছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিটা দপ্তর যেভাবে সহায়তা করছে, তা চলমান থাকলে ডিসেম্বরে কর্মী পাঠানোর গতি দুই থেকে তিন গুন বৃদ্ধি পাবে”
বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিস (বায়রা) সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মো. রুহুল আমিন স্বপন বলেন, “করোনা সংক্রমণের পর মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সেক্টরে বিপুল সংখ্যক বিদেশি কর্মীর প্রয়োজন দেখা দেয় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের সরকারকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে আর তাদের পছন্দের শীর্ষ দুটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ ও নেপাল বাংলাদেশ নানা কারণে শুরুর দিকে সিদ্ধান্তহীনতায় থাকায়, নিয়োগদাতারা বিকল্প খুঁজতে থাকেন এরপর তারা নেপালের দিকে ছোটেন তাদের যেই সংখ্যক কর্মী খুবই জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন ছিল, তা নেপাল থেকে প্রথমেই নিয়ে নেন এখন দ্বিতীয় ধাপের কর্মী নিচ্ছে বাংলাদেশ থেকে যা একটু ধীরে নিলেও তাদের কারখানার কাজ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না তবে ধীরে হলেও তারা কর্মী নিচ্ছেন এবং অনুমোদন নেয়া সব কর্মীই পর্যায়ক্রমে নিচ্ছেন তারা এখানে বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সির কোন গাফিলতি নেই”
রুহুল আমিন স্বন বলেন, “এখন সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে নিয়োগদাতারাও কর্মীদের আবাসন ব্যাবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় গুছিয়ে এনেছেন ডিসেম্বরের মধ্যে আরও অধিক সংখ্যক কর্মী যাবে প্রতিদিন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বর্তমানে যেই সহায়তা দিয়ে আসছেন, তা অব্যাহত থাকলে আমরা কাঙ্খিত সংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারবো”
কর্মী পাঠানোর গতি কমের বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম এনডিসি বলেন, “মাননীয় মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের নির্দেশে বিএমইটি দ্রুত সময়ে ছাড়পত্র দিচ্ছে মন্ত্রণালয় থেকেও খুব কম সময়ে নিয়োগ অনুমতি দেয়া হচ্ছে দ্রুত সময়ে বেশি কর্মী মালয়েশিয়া পাঠাতে সরকার সব ধরণের সহায়তা করছে মন্ত্রী মহোদয়ের কঠোর নির্দেশের পর রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোও আরো দ্রুত তাদের কাজ শেষ করছে বলে আমাদের জানিয়েছে এখন সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তিতে বোঝা যাবে কতটুকু উন্নতি হয়েছে তবে আশা করছি ইতিবাচক পরিবর্তনই হবে”
২০২১ সালের ১৯ ডিসম্বর সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর, চলতি বছরের ৮ আগস্ট থেকে কর্মী যাওয়া শুরু হয় মালয়েশিয়ায়। সেই থেকে নিয়মিত কর্মী যাচ্ছে দেশটিতে। শুরুতে ২৫ টি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠানোর অনুমোদন পায় এরপর আরও দুই দফায় ৭৫ এজেন্সিকে অনুমোদন দেয় মালয়েশিয়া সরকার সব মিলিয়ে এখন ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাচ্ছে দেশটিতে।