ঢাকা , শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

কাতারে হাজারো প্রবাসীকে বাসা থেকে উচ্ছেদ ! (ভিডিওসহ)

Print Friendly, PDF & Email

 

আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই কাতারে বসবে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ২০২২। আর এই বিশ্বকাপ দেখতে আসা অতিথি ও পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে রাজধানী দোহার আবাসস্থল থেকে প্রবাসী কর্মীদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে এমন তথ্য। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ দেখতে আসা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে দোহার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলো খালি করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওই ভবনগুলোর প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভাড়া নিয়েছে কাতার সরকার। আর আয়োজকদের ওয়েবসাইটে আল মানসুরা ও অন্যান্য জেলায় অবস্থিত এই ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ভবনগুলোর একেকটি ফ্ল্যাটের প্রতি রাতের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪০ থেকে ৪২৬ মার্কিন ডলার।

এদিকে উচ্ছেদের শিকার মোহাম্মদ নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আক্ষেপের সুরে অভিযোগ করেন, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশটিতে বিভিন্ন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, টুর্নামেন্টের সময় ঘনিয়ে আসতেই তাদেরকে ছুড়ে ফেলছে দেশটি।

এছাড়াও উচ্ছেদের শিকার এমন আরো কয়েকজন অভিযোগ করেন, বেশ অনেকগুলো ভবন খালি করে তালা মেরে দিয়েছে মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে প্রবাসী কর্মী বিশেষ করে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এবং আফ্রিকানদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের থাকার জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। অনেকে বাধ্য হয়ে তালাবদ্ধ বাড়িগুলোর সামনে বিছানা বিছিয়ে কোনোমতে রাত পার করেছেন।

সদ্য খালি করা হয়েছে এমন এক ভবনের বাসিন্দারা জানান, ওই ভবনে ১২ শ মানুষ থাকতেন। গত বুধবার রাতে হুট করে বাসিন্দাদের ভবন খালি করতে ২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। আড়াই ঘণ্টা পর মিউনিসিপ্যালিটির কর্মকর্তারা ফিরে আসেন এবং জোর করে সবাইকে বাইরে বের করে দিয়ে দরজায় তালা মেরে দেন। বাসিন্দাদের দাবি, অনেকে সময়মতো ফিরে নিজেদের জিনিসপত্রও সরিয়ে নিতে পারেননি।

পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ১১ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্র দেশ কাতার। দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লাখ, যার ৮৫ শতাংশই প্রবাসী কর্মী। উচ্ছেদের শিকার হওয়া এই কর্মীদের অধিকাংশই ড্রাইভার কিংবা দিনমজুর। তবে বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র ৪ সপ্তাহ আগে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতার।

তবে এনিয়ে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বিশ্বকাপের জন্য নয় বরং রাজধানী দোহায় বসবাসযোগ্য নয় এমন কিছু ভবনের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এবং সংস্কারের উদ্দেশ্যেই এই অভিযান পরিচালনা করছে দেশটির প্রশাসন। তবে বিনা নোটিসে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার আশ্বাসও দেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Tag :

কাতারে হাজারো প্রবাসীকে বাসা থেকে উচ্ছেদ ! (ভিডিওসহ)

আপডেট: ১০:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর ২০২২
Print Friendly, PDF & Email

 

আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরেই কাতারে বসবে ফুটবল বিশ্বকাপের আসর ফিফা ওয়ার্ল্ডকাপ ২০২২। আর এই বিশ্বকাপ দেখতে আসা অতিথি ও পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে রাজধানী দোহার আবাসস্থল থেকে প্রবাসী কর্মীদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে দেশটির সরকার। আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসে এমন তথ্য। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, বিশ্বকাপ দেখতে আসা পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করতে দোহার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলো খালি করছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওই ভবনগুলোর প্রায় সবগুলোই বিশ্বকাপ উপলক্ষে ভাড়া নিয়েছে কাতার সরকার। আর আয়োজকদের ওয়েবসাইটে আল মানসুরা ও অন্যান্য জেলায় অবস্থিত এই ভবনের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ভবনগুলোর একেকটি ফ্ল্যাটের প্রতি রাতের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২৪০ থেকে ৪২৬ মার্কিন ডলার।

এদিকে উচ্ছেদের শিকার মোহাম্মদ নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আক্ষেপের সুরে অভিযোগ করেন, বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে দেশটিতে বিভিন্ন নতুন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে, টুর্নামেন্টের সময় ঘনিয়ে আসতেই তাদেরকে ছুড়ে ফেলছে দেশটি।

এছাড়াও উচ্ছেদের শিকার এমন আরো কয়েকজন অভিযোগ করেন, বেশ অনেকগুলো ভবন খালি করে তালা মেরে দিয়েছে মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে প্রবাসী কর্মী বিশেষ করে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এবং আফ্রিকানদের জোর করে বের করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি তাদের থাকার জন্য বিকল্প কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। অনেকে বাধ্য হয়ে তালাবদ্ধ বাড়িগুলোর সামনে বিছানা বিছিয়ে কোনোমতে রাত পার করেছেন।

সদ্য খালি করা হয়েছে এমন এক ভবনের বাসিন্দারা জানান, ওই ভবনে ১২ শ মানুষ থাকতেন। গত বুধবার রাতে হুট করে বাসিন্দাদের ভবন খালি করতে ২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় মিউনিসিপ্যালিটি কর্তৃপক্ষ। আড়াই ঘণ্টা পর মিউনিসিপ্যালিটির কর্মকর্তারা ফিরে আসেন এবং জোর করে সবাইকে বাইরে বের করে দিয়ে দরজায় তালা মেরে দেন। বাসিন্দাদের দাবি, অনেকে সময়মতো ফিরে নিজেদের জিনিসপত্রও সরিয়ে নিতে পারেননি।

পারস্য উপসাগরে অবস্থিত ১১ হাজার ৫৮১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ছোট্র দেশ কাতার। দেশটির মোট জনসংখ্যা মাত্র ৩০ লাখ, যার ৮৫ শতাংশই প্রবাসী কর্মী। উচ্ছেদের শিকার হওয়া এই কর্মীদের অধিকাংশই ড্রাইভার কিংবা দিনমজুর। তবে বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র ৪ সপ্তাহ আগে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ করায় সমালোচনার মুখে পড়েছে কাতার।

তবে এনিয়ে দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বিশ্বকাপের জন্য নয় বরং রাজধানী দোহায় বসবাসযোগ্য নয় এমন কিছু ভবনের দীর্ঘমেয়াদী পুনর্গঠন প্রক্রিয়া এবং সংস্কারের উদ্দেশ্যেই এই অভিযান পরিচালনা করছে দেশটির প্রশাসন। তবে বিনা নোটিসে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করার আশ্বাসও দেন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।