শঙ্কা পিছু ছাড়ছেনা মালয়েশিয়ায় থাকা প্রবসীদের। দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের এক নোটিশের কারণে ভিসা নবায়ন করা নিয়ে শঙ্কায় লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশিসহ অভিবাসী কর্মীরা।
পহেলা জুলাই দেশটির ইমিগ্রেশন বিভাগের পরিচালক (বিদেশি শ্রমিক) হামিদি বিন আদম স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বলা হয়েছে, প্ল্যান্টেশন ১৪ নং ও রিহায়ারিং প্রোগ্রামে যারা ৫ নম্বর ভিসা পেয়েছেন তাদের ৬ নং ভিসা আর নবায়ন হবে না। অর্থাৎ এই প্রবাসীদের ফেরত যেতে হবে নিজ দেশে। নোটিশের মাধ্যমে আদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশটির সবকটি ইমিগ্রেশন বিভাগকে জানিয়ে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে যারা ছুটিতে দেশে গিয়েছেন তাদের ফিরে আসা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া বৈধকরণ প্রকল্পে (রিহায়ারিং) যারা বৈধ হয়েছিলেন, তারা ৬ নম্বর ভিসা (ষ্টিকার) পাবেন না। আর ভিসা না পেলে অবৈধ হয়ে যাবে অবৈধ।
এই সুযোগে ভিসা নবায়ন করে দেওয়ার নামে অবৈধ অর্থের লেনদেন এবং আবারও অসহায় কর্মীদের প্রতারিত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস থেকেও কোন ধরনের নির্দেশনা ইস্যু করা হয়নি। ফলে নানা ভাবে আবারো প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন প্রবাসী কর্মীরা।
২০১৬ সালে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯২ জন বিদেশি কর্মী বৈধকরণ (রি-হায়ারিং) প্রকল্পে নিবন্ধিত হয়েছিলেন। সে সময় অবৈধদের বৈধ হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি ও অন্যান্য দেশের এজেন্টরা ভিসা না করে প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে লাখ লাখ রিঙ্গিত হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
সেই সময়ের প্রতারণার কোন প্রতিকার তারা পাননি, বরং এখানে সেখানে জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। অনেকেই গ্রেফতার হয়ে শাস্তি ভোগ করেছেন। কেউ কেউ খালি হাতে দেশে ফিরে গিয়েছেন।
পরে মালয়েশিয়া অবৈধদের ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির মাধ্যমে জেল শাস্তি ব্যতীত শুধু জরিমানা দিয়ে নিজ দেশে ফেরত যাবার সুযোগ দেয়। তখনও প্রতারিত হয়ে কোম্পানির গাফিলতি এবং ইমিগ্রেশনের নিয়মের কারণে অবৈধ হয়ে অনেককে শাস্তি ভোগ করতে হয় এবং খালি হাতে দেশে ফিরে যেতে হয়।
সম্প্রতি শেষ হওয়া রি-ক্যালিব্রেসি কর্মসূচির মাধ্যমে ৫০০ রিঙ্গিত জরিমানা দিয়ে অবৈধদের নিজ দেশে ফিরে যাবার সুযোগ দেয়। যারা সুযোগ নিয়েছেন তারাও নানা প্রতারণা আর ইমিগ্রেশনের নিয়মের কারণে অবৈধ হয়েছিলেন। এ সুযোগটি ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এরপর অবৈধদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানোর নিয়মিত প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইমিগ্রেশন বিভাগ।
এমন কঠোর পরিস্থিতির মধ্যেই রিহায়ারিং কর্মসূচির আওতায় ভিসা নিয়ে বৈধভাবে থাকা প্রবাসী কর্মীদের আর ভিসা নবায়ন না করার ঘোষনা ফের বিপদে ফেলে দিয়েছে প্রবাসী কর্মীদের। মালয়েশিয়ার আইন অনুযায়ী নিয়োগকর্তা ব্যতীত ভিসা পাওয়া এবং অবস্থান করার সুযোগ না থাকায় নিয়োগকর্তাদের এগিয়ে আসার আহবান জানিয়েছেন অভিবাসী বিষয়ক সংস্থার কর্তারা।
তাদের দাবি ৪৫ বছর বয়স বা ১০ বছর ব্যাপী মালয়েশিয়া থাকার যে স্বাভাবিক নিয়ম আছে সে অনুযায়ী ভিসা নবায়ন করা হোক। তাহলে নিয়মের মধ্যেই কর্মীরা অবস্থান করে এই করোনা কালে মালয়েশিযার অর্থনীতি সচল ও চাঙ্গা রাখতে পারবে। যেহেতু নতুন করে কর্মী নিয়োগে ধীরগতি সেহেতু এসকল কর্মীদের ভিসা নবায়ন করার সুযোগ দিলে মালয়েশিয়ার লাভ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
তবে ভিসা নবায়ন করার লোভে পড়ে প্রতারিত হবার আগে দূতাবাস থেকে সঠিক পরামর্শ পাবার আকুতি জানিয়েছেন প্রবাসী কর্মীরা।