বিদেশি কর্মী নিয়োগে মালয়েশিয়া সরকারের পদ্ধতি খুবই আধুনিক ও নিয়মতান্ত্রিক। দেশটিতে কর্মী নিয়োগে বেশকিছু ধাপ অতিক্রম করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের পুরো পদ্ধতি তুলে ধরা হলো।
কোন নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান বিদেশি কর্মী নিয়োগ দিতে চাইলে, প্রথমে তাকে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। মন্ত্রণালয় যাচাই-বাছাই শেষে উপযুক্ত মনে করলে অনুমোদন দিয়ে থাকে। এরপর নিয়োগদাতার চাহিদাপত্র বা মূল ভিসায় সত্যায়নের জন্য বাংলাদেশের একটি রিক্রুটিং এজেন্সির পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কাগজসহ অনলাইন পদ্ধতিতে হাইকমিশনে জমা দিতে হয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রমকল্যাণ উইং এর কর্মকর্তারা নিয়োগদাতা কোম্পানী পরিদর্শন করে প্রতিষ্ঠানটির কর্মী নিয়োগের সক্ষমতা আছে কিনা, কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা কেমন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা যাচাই করে থাকেন। পরিদর্শন শেষে সব ঠিকঠাক থাকলে নিয়োগদাতার চাহিদাপত্র বা মূল ভিসায় সত্যায়ন করেন শ্রমকল্যাণ উইং এর কর্মকর্তারা।
এরপর সেই সকল কাগজপত্রসহ বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ অনুমতির জন্য আবেদন করবেন সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ অনুমতি পাওয়ার পর কর্মী বাছাই করা হয়।
মালয়েশিয়া যেতে কর্মীদের দুই দফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। একবার বাংলাদেশে আরেকবার মালয়েশিয়া পৌঁছানোর পর। বাংলাদেশের মেডিকেল সেন্টারগুলো মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদিত হতে হবে। প্রথম বার মেডিকেল বা স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক থাকলে, কর্মীর পাসপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্টসহ অন্যান্য কাজপত্র অনলাইন পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কর্মীর নামে কলিং ভিসা ইস্যু করে ইমিগ্রেশন বিভাগ। এরপর বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার হাইকমিশন থেকে ভিসা স্টিকারের জন্য জমা দিতে হয়। কর্মীর পাসপোর্টে সেই স্টিকার ভিসা যুক্ত করা হয়। তখনই একজন কর্মী উড়োজাহাজের টিকিট নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা করতে পারবেন।
মালয়েশিয়া যাওয়ার পর কর্মীর আরেক দফা মেডিকেল করা হয়। রিপোর্ট ঠিক থাকলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে কর্মীর জন্য ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে থাকে।
মালয়েশিয়া সরকার এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে এফডব্লিউসিএমএস নামে একটি অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে। সকল দেশ থেকে এই পদ্ধতিতেই কর্মী নিয়োগ দেয় মালয়েশিয়া সরকার। দেশটির সংশ্লিষ্ট দফতরের পাশাপাশি, বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিস (হাইকমিশন ও বিএমইটি) এবং অনুমোদিত মেডিকেল সেন্টারে এই অনলাইন পদ্ধতি সংযুক্ত থাকে।
সমঝোতা স্বারক অনুযায়ি মালয়েশিয়া যেতে কর্মীদের কিছু শর্ত মানতে হচ্ছে। এবার দেশটিতে যেতে কর্মীদের আগাম বিএমইটির ডাটাব্যাংকে নিবন্ধন করতে হচ্ছে। নিবন্ধনে কর্মীদের বয়স ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। কর্মীদের পূর্ণ ডোজ বা দুই ডোজ করোনা টিকা নেয়া থাকতে হবে। কর্মীদের বেতন হবে ১ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিংগিত বা বাংলাদেশি প্রায় ৩২, ০০০ টাকা। কোম্পানীর প্রয়োজন অনুয়ায়ি ওভারটাইম থাকতে পারে (তবে নিশ্চিত নয়)। কর্মীদের চুক্তির মেয়াদ ৩ বছর। প্রয়োজনে ১০ বছর পর্যন্ত নবায়ন করতে পারবে নিয়োগদাতারা। কর্মীর থাকা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা করবে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। তিন বছর শেষে দেশে আসতে চাইলে কোম্পানী কর্মীর জন্য উড়োজাহাজের টিকিট দিবে।