চলতি জুন মাসেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানো হবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তবে সেটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনো মালয়েশিয়া কর্মী পাঠাতে কোন কোন প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে তা ঠিক করতে পারেনি এ সংক্রান্ত আন্ত:মন্ত্রণালয় কমিটি। এছাড়া, কর্মীদের জন্য বাংলাদেশ অংশে কতো খরচ হবে সেটিও ঠিক হয়নি। জটিলতা রয়েছে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে চাহিদাপত্রে সত্যায়নের বিষয়টিতেও। বিএমইটির নিবন্ধন শুরু হওয়া ছাড়া আর কোন বিষয়ই চুড়ান্ত করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
মঙ্গলবার ( ২১ জুন) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এখনো মেডিকেল সেন্টার পরিদর্শনই করতে পারেনি এ বিষয়ে গঠিত কমিটি। তারা শুধু মিটিং করেই সময় পার করছেন। এতে করে কর্মী পাঠানোর পুরো প্রক্রিয়া থমকে আছে। সূত্রটি বলছেন, কর্মীদের দ্রুত সময়ে পাঠানোর বিষয়ে মন্ত্রীর চেষ্টার পরও, দায়িত্বরত কর্মকর্তারা সঠিক সময়ে অন্যান্য কাজ শেষ না করায় ক্ষুব্ধ মন্ত্রী নিজেই।
এছাড়া, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রমকল্যাণ উইং থেকে বলা হচ্ছে ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে না পাওয়ায় চাহিদাপত্রে সত্যায়ন করতে পারছেন না তারা। যদিও এই দাবিকে অযৌক্তিক বলছেন মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সাথে যুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।
এদিকে, বাংলাদেশের জন্য অনুমোদন পাওয়া চাহিদাপত্রগুলো হাইকমিশনের সত্যায়নের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আগ্রহী থাকলেও, নানা জটিলতার কারণে এখন বিকল্প দেশের দিকে ছুটছেন। দেশটিতে অবস্থানরত খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে নানা জটিলতা থাকায়, এখন নেপালের জন্য প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি কর্মীর চাহিদাপত্র অনুমোদন পাচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের কর্মীরা পিছিয়ে পড়ছেন বলেও মনে করেন তারা। সার্বিকভাবে ক্ষতি হচ্ছে দেশের।
এর আগে রবিবার ( ১৯ জুন) বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে একটি চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়া সরকারের কয়েকটি দফতরে পাঠিয়েছে শ্রমকল্যাণ উইং। যার একটি কপি এসেছে প্রবাস বার্তার কাছে। সেই চিঠিতে ৮টি বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। একইসাথে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনলাইন পদ্ধতিতে আপলোড নিশ্চিত করায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিকেল সেন্টার চুড়ান্ত করার বিষয়টি অন্যতম। এছাড়া কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত পরবর্তিতে কোন ক্ষতিপূরণ দরকার হলে, সেটির নিশ্চয়তা করা। রিক্রুটিং এজেন্সি এবং মালয়েশিয়ার নিয়োগদাতার মধ্যকার চুক্তি অনলাইন পদ্ধতিতে থাকা। চাহিদা পত্র, মালয়েশিয়া সরকারের অনুমোদনের কপি, পাওয়ার অব অ্যটর্নির কপিসহ প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র অনলাইন পদ্ধতিতে আপলোড নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে সেই চিঠিতে। সত্যায়ন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার জন্য এসব বিষয়ের নিশ্চয়তা জরুরি বলে মনে করছে হাইকমিশন।
হাইকমিশনের শ্রমকল্যাণ উইং-এর দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, সত্যায়নের জন্য জরুরি হচ্ছে, মালয়েশিয়া সরকার মনোনিত ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকা। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কোন সরকারের পক্ষ থেকে সেই তালিকা দেয়া হয়নি হাইকমিশনকে। এজন্য তারা সত্যায়ন দিচ্ছেন না বলে জানানো হয়। ঐ কর্মকর্তা বলেন, সরকারিভাবে এজেন্সির তালিকা এবং এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতিতেই কর্মী পাঠানো হবে, সেই বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পাননি তারা। এসব বিষয় নিশ্চিত হলেই সত্যায়ন শুরু করতে পারবেন তারা।
তবে শ্রমকল্যাণ উইংয়ের এই দাবি মানতে নারাজ মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর সাথে যুক্ত একাধিক রিক্রটিং এজেন্সির মালিক। একইসাথে আগেরবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞতা আছে এমন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকের সাথে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা বলেন, এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতি হচ্ছে মালয়েশিয়া সরকারের কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতি। ১৪টি দেশ থেকে তারা এই পদ্ধতিতেই কর্মী নেয়। সেই পদ্ধতিতেই সব উল্লেখ রয়েছে। মালয়েশিয়া সরকার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই অনুমোদন দেয়। সেই পদ্ধতিতেই রিক্রুটিং এজেন্সির নামও থাকে। এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতিতে সব তথ্য দেখার সুযোগ আছে হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের। তারপরও সরকারের কাছ থেকে তালিকা চাওয়া সময়ক্ষেপন বলে মনে করছেন রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকরা।
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অভিজ্ঞ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক, কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর নির্দেশনার পরও কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় এই ধীরগতি গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী চলতি জুন মাসেই কর্মী পাঠানোর বিষয়ে একাধিকবার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন শাখার এমন সমন্বয়হীনতা, মন্ত্রীর ঘোষণার সাথে সাংঘর্ষিক। এতে করে দেশের এবং কর্মীদের ক্ষতির পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ে ভাবমুর্তি নষ্ট হচ্ছে বলেও মনে করেন বায়রার সাবেক এই নেতা।
এবিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানান, দ্রুত সময়ে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে সব ধরণের চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মী পাঠানোর সাথে দুই দেশের নানা প্রক্রিয়া সম্পৃক্ততা রয়েছে। আবার সকল দিক বিবেচনাও করতে হচ্ছে। বড় কর্মযজ্ঞ হওয়ায় কিছুটাতে সময় লাগতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাতে সব কাজ শেষ হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করেন, শিগগিরই কর্মী পাঠানোর বিষয়টি চুড়ান্ত হবে।
২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বন্ধ হওয়ার ৪০ মাস পর গেলো বছরের ১৯ ডিসেম্বর দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্বারক সই হয়। এর পর চলতি মাসের ২ তারিখ ঢাকায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে শ্রমবাজার খোলার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। একইসাথে জুনের মধ্যেই মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে ঘোষণা দেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। ১৯ জুন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম সারাভানান আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানান, বাংলাদেশ থেকে ২৫ টির মাধ্যমে মোট ২৭৫ টি রিক্রুটিং এজেন্সি থেকে কর্মী নিয়োগ দেবে দেশটি।