চলতি বছরের ২ জুন ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত হয় মালয়েশিয়া শ্রমবাজার। তার পর থেকে বিভ্রান্তিমূলক নানা খবর প্রচার হচ্ছে দুই দেশেই। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ সংক্রান্ত পরিস্থিতি তুলে ধরে বিবৃতি দিয়েছেন দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান।
রোববার (১৯ জুন) মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এম সারাভানান জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগে ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি বাছাইয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কথিত সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রীর সম্পূর্ণ বিবৃতি বাংলায় হুবহু তুলে ধরা হল:
বিবৃতিতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী বলেন, “আমি এই মর্মে পরিস্কার ভাবে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশ হতে কর্মী নিয়োগে ২৫টি কোম্পানি নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথিত সংশ্লিষ্টতা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে আমার দেখা করা প্রসঙ্গটি ছিল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের বর্তমান অবস্থা ব্যাখ্যা করা, বিদেশি কর্মীদের বর্তমান অবস্থান এবং আমার মন্ত্রণালয়ের দ্বারা উন্নত কর্ম পরিবেশের জন্য গৃহীত উদ্যোগগুলি বর্ণনা করা।”
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, “প্রাথমিক ভাবে বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ১৫২০টি কোম্পানির তালিকা দেয়। যার মধ্য হতে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৫টি কোম্পানিকে মনোনিত করে। এই প্রক্রিয়ার পূর্বে মাত্র ১০টি রিক্রুটমেন্ট কোম্পানি বাংলাদেশ হতে শ্রমিক নিয়োগে নিয়োজিত ছিল।”
এম সারাভানান বিবৃতিতে বলেন, “সুতরাং বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থান ও কল্যাণের স্বার্থে এজেন্সি সংখ্যা ১০টি হতে ২৫টিতে উন্নিত করা হবে। যাতে করে ২৫টি নির্ধারিত কোম্পানির মাধ্যমে একটি ভারসাম্যমূলক কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা যায়।
তবে একচেটিয়া আধিপত্য ও সম্ভাব্য অপব্যবহার রোধ এবং কর্মীদের জন্য আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত তালিকা হতে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় আরও ২৫০টি কোম্পানিকে মনোনীত করে। এই ২৫০টি কোম্পানী ২৫টি কোম্পানির কাঠামোর মধ্যে কাজ করবে। সহজ ভাবে বলা যায় ২৫টি কোম্পানীর প্রত্যাকের তত্ত্বাবধানে আরও ১০টি করে সহযোগী কোম্পানী হিসেবে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মান বজায় রেখে কাজ করবে।”
মালয়েশিয়ার মন্ত্রী বলেন, “এখন প্রশ্ন হলো প্রাথমিক ২৫টি এবং সহযোগী ২৫০টি কোম্পানির মধ্যে পার্থক্য কী? প্রথমতঃ মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় ২৫টি মনোনিত কোম্পানির সাথে কাজ করবে। এই কোম্পানী সমূহকে মন্ত্রণালয় ঘনিষ্টভাবে তদারকি করবে তারা যেন বিদেশি কর্মীদের কর্ম পরিবেশ, জীবনযাত্রা ও কর্মক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্তৃক নির্ধারিত মান মেনে চলে। মালয়েশিয়া জবরদস্তি মূলক শ্রম বন্ধের ব্যাপারে খুবই আন্তরিক কেননা এ বিষয়টি মালয়েশিয়ার আন্তর্জাতিক অবস্থানকে দূর্বল করে দেয়। দ্বিতীয়তঃ এই ২৫টি কোম্পানির দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো তাদের সহযোগী ২৫০ কোম্পানির মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে মানব সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা।”
এম সারাভানান বলেন, “এই সুযোগে আমি সকল ভুল ধারণা দূর করার জন্য বলতে চাই যে, বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্মী সরবরাহকারি দেশ সমূহের উপর অবশ্যই মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রাধিকার থাকবে। অন্যদিকে, মন্ত্রণালয় আমাদের নিজ কোম্পানিগুলোর উৎপাদন চাহিদা মেটাতে বিদেশি কর্মী নিয়োগের অনুমোদন প্রদান করবে। শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়, ১৪টি কর্মী সরবরাহকারী উৎস দেশের যে কোনটি হতে কোম্পানিসমূহ কর্মী নিয়োগ করতে পারবে। অধিক দায়িত্ব গ্রহণের পর অনিয়ন্ত্রিত নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত না রাখার বিষয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, কেননা এতে বর্হিবিশ্বে আমাদের দেশের সুনাম নষ্ট হয়েছিল।”