সৌদি আরবের মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় ঘোষিত (National Transformation Programme) এর অংশ হিসেবে গত বছরের ৪ নভেম্বর শ্রম খাত সংস্কারের জন্য (Labour Reform Initiative) নামে একটি প্রোগ্রাম ঘোষণা করেছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এই উদ্যোগের লক্ষ্য হলো আকর্ষণীয় একটি শ্রমবাজার তৈরি করা এবং মানব সম্পদ ও কর্ম পরিবেশের উন্নয়ন করা।
এই ব্যবস্থার ফলে স্পন্সর/ কফিল হুরুব দিতে পারবেন না এমন তথ্যটি সঠিক নয়। কর্মী কফিলের কাজে নিয়োজিত না থেকে না জানিয়ে অন্যত্র চলে গেলে কফিল নিজের দায় এড়ানোর জন্য হলেও হুরুব দিবে এবং এই অধিকার কফিলের বহাল থাকবে। আগে প্রদত্ত হুরুব দেয়া কর্মীরাও এই ব্যবস্থার ফলে বৈধ হওয়ার কিংবা অন্যত্র ট্রান্সফার হওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই ব্যবস্থাটি কোন সাধারণ ক্ষমা নয়। এই ব্যবস্থার ফলে সকল কর্মী সরকারের অধীনে চলে গিয়েছে বা চলে যাবে এমন ধারনার কোন ভিত্তি নেই।
এই তিনটি সুবিধাই অনলাইন প্লাটফর্ম আবশির ও কিওয়া এর মাধ্যমে ১৪ মার্চ ২০২১ থেকে কার্যকর হয়েছে। এই সুবিধাগুলো বাস্তবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে কাজের চুক্তিপত্র আপলোড করাসহ অনলাইনে ওয়েজ প্রটেকশন সিস্টেম কার্যকর করবে।
এই ব্যবস্থা বর্তমানে শুধুমাত্র প্রাইভেট কোম্পানি/মুয়াসসাসার (ছোট ছোট জনশক্তি প্রতিষ্ঠান) কর্মীদের জন্য কার্যকর করা হবে। গৃহকর্মে নিযুক্ত বা ব্যক্তিখাতের অধীনে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত কর্মীগণ আপাতত এই ব্যবস্থার আওতাভুক্ত হবেননা।
এই সুবিধাসমূহের দ্বারা বর্তমানে আপাতত শুধু মাত্র প্রাইভেট কোম্পানি/ মুয়াসসাসায় কর্মরত প্রকৃত কর্মীরাই উপকৃত হবে। এতে তথাকথিত ফ্রি ভিসার কর্মীরা কিংবা কফিলের নামে কাভার আপ বিজনেসের সাথে জড়িত কোন প্রবাসী উপকৃত হবেননা। কেননা তারা তাদের স্পন্সরের সাথে মৌখিক চুক্তির মাধ্যমে পারষ্পরিক সম্মতির মাধ্যমে তাদের ব্যবসা সংক্রান্ত কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। যেহেতু এরকম কার্যক্রম সৌদি শ্রম আইন অনুযায়ী অনুমোদিত নয় সেহেতু এরকম ব্যবস্থায় যেকোন সময় যেকোন ক্ষেত্রে স্পন্সররা এসব কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে। মনে রাখবেন ফ্রি ভিসার কর্মী সব সময়ই কফিলের সাথে গোপন চুক্তিতে কাজ করে, যা সম্পুর্নই কফিলের খেয়াল খুশি মতো হয়ে থাকে।
এই ইনিশিয়েটিভ দ্বারা কাফালা সিস্টেম বিলুপ্ত হয়নি; বরং কিছু ক্ষমতা (স্পন্সরের অনুমতি ব্যতিরেকে ট্রান্সফার, এক্সিট রি এন্ট্রি ও এক্সিট ভিসা প্রাপ্তি) কর্মীকে প্রদান করা হয়েছে যা স্পন্সরের/ কফিলের কাছে নিরঙ্কুশভাবে ছিল। এসব ক্ষমতা স্পন্সরের নিকট থাকায় স্পন্সরগণ অনেক ক্ষেত্রেই এর সুযোগ নিয়ে কর্মীদের শোষণ করার সুযোগ পেত।
আলোচ্য সংস্কারসমূহ স্পন্সর কর্তৃক প্রবাসী কর্মীদেরকে আর্থিকভাবে শোষণ করার মাত্রা কমাতে এবং সৌদি আরবে বৈধ কর্মে কর্মরত প্রবাসী শ্রমিকদের সহজে ও বৈধভাবে কর্ম পরিবর্তনে সহায়ক হবে মর্মে প্রতীয়মান হয়। তবে এই সুবিধাগুলো ভোগ করতে হলে অবশ্যই কর্মীদের অনলাইন সিস্টেম ব্যবহারের সাথে পরিচিত হতে হবে।
মনে রাখা দরকার এই তিনটি সুবিধা পেতে হলে কর্মীকে অবশ্যই অনলাইন কন্ট্রাক্ট সিস্টেমে নিবন্ধিত হতে হবে। খুরুজ আওদা (এক্সিট- রি এন্ট্রি) কিংবা খুরুজ নিহায়ী (ফাইনাল এক্সিট) ভিসা কর্মী নিজে অনলাইনে আবেদন করে নিতে হলে তাকে এর ফি পরিশোধ করতে হবে।
প্রদত্ত সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ আওদা (এক্সিট- রি এন্ট্রি) ভিসার আবেদন কর্মীকে সৌদিতে থাকা অবস্থায়ই করতে হবে। সৌদির বাইরে থেকে আবেদন করা যাবেনা। আবেদন করতে হবে আবশির ইন্ডিভিজুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে। কর্মী আবেদন করলে আবেদনের একটি মেসেজ কফিলের নিকট যাবে। এই আবেদন প্রসেস হতে দশ দিন সময় লাগবে। কর্মী নিজেও তার আবেদন দশ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করতে পারবেন।
এই সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ আওদা (এক্সিট- রি এন্ট্রি) ভিসার মেয়াদ হবে মাত্র ৩০ দিন, এর বেশি নয়। ভিসাটি হবে সিঙ্গেল রি-এন্ট্রি, মাল্টিপল নয়। কর্মী দেশ থেকে আবেদন করে মেয়াদ বৃদ্ধি করতে পারবেন না। তবে কফিল চাইলে ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করে দিতে পারবেন। এই সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ আওদা (এক্সিট- রি এন্ট্রি) ভিসা নিয়ে দেশে যাওয়ার পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফিরে না আসলে কাজের উদ্দেশ্যে আর কখনোই সৌদিতে আসা যাবেনা।
প্রদত্ত সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ নিহায়ী (ফাইনাল এক্সিট) ভিসার আবেদন কর্মীকে আবশির ইন্ডিভিজুয়াল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে করতে হবে। কর্মী আবেদন করলে আবেদনের একটি মেসেজ কফিলের নিকট যাবে। এই আবেদন প্রসেস হতে দশ দিন সময় লাগবে। কর্মী নিজেও তার আবেদন দশ দিনের মধ্যে প্রত্যাহার করতে পারবেন। এই সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ নিহায়ী (ফাইনাল এক্সিট) ভিসার মেয়াদ হবে মাত্র পনের দিন, এর বেশি নয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে (১৫ দিন) কর্মী সৌদি ত্যাগ না করলে তিনি ইকামা ও শ্রম আইন ভঙ্গকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন। এই সময়ের মধ্যে কর্মী চাইলে ফাইনাল এক্সিট ভিসা বাতিল করার আবেদনও করতে পারবেন। চুক্তির মেয়াদ থাকাকালীন চুক্তি শেষ না করেই এই সুবিধা অনুযায়ী খুরুজ নিহায়ী (ফাইনাল এক্সিট) ভিসা নিয়ে দেশে গেলে কাজের উদ্দেশ্যে আর কখনোই সৌদিতে আসা যাবেনা।
কর্মীকে অন্যত্র ট্রান্সফার হতে হলে তলবকারী কোম্পানির সকল লাইসেন্স হালনাগাদ থাকতে হবে, কোম্পানির অবস্থা মিডল গ্রীন কিংবা তার উপরের অবস্থা সম্পন্ন হতে হবে, ওয়েজ প্রটেকশন সিস্টেম মেনে চলতে হবে, ১০০% কর্মীর অনলাইন চুক্তি থাকতে হবে। তেমনি কর্মীও বৈধ হতে হবে, অনলাইনে কন্ট্রাক্টে নিবন্ধিত থাকতে হবে, এবং অন্য কোন কোম্পানি হতে আগের কোন তলব থাকা যাবেনা।
এই সবগুলো শর্ত পরিপূর্ন থাকলে কোন কোম্পানি অন্য কোম্পানির কর্মীকে ট্রান্সফারের জন্য কিওয়া ওয়েব সাইটের মাধ্যমে চুক্তিপত্রসহ ট্রান্সফারের তলব দিবে। তলব দেয়ার পর কর্মীর নিকট মেসেজ আসবে। তিনি চুক্তিটি দেখে সম্মত হলে ওকে করে দিবে। কর্মীর ইকামার মেয়াদ শেষ হলে পূর্বের কফিলের কোন অনুমতির প্রয়োজন হবেনা। তবে ইকামার এবং কন্ট্রাক্টের মেয়াদ থাকলে পূর্বের কফিল/ স্পন্সরের সম্মতির প্রয়োজন হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী এই তিনটি সুবিধা ছাড়া আর কোন সুবিধার কথা বলা হয়নি। কেউ অন্য সুবিধার কথা বলে থাকলে তার দায় সেই ব্যক্তিরই। কর্মীর ট্রান্সফার হওয়া, এক্সিট রিএন্ট্রি ও ফাইনাল এক্সিট ভিসা পাওয়ার ক্ষমতার অর্থ এই নয় যে কফিলের নিকট হতে এই ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। কফিলও ইচ্ছা করলে এই ক্ষমতা এখনো প্রয়োগ করতে পারবেন।
মনে রাখা দরকার এই তিনটি সুবিধা পেতে হলে কর্মীকে অবশ্যই অনলাইন কন্ট্রাক্ট সিস্টেমে নিবন্ধিত হতে হবে এবং আবশিরে তা প্রদর্শিত থাকতে হবে। খুরুজ আওদা (এক্সিট- রি এন্ট্রি) কিংবা খুরুজ নিহায়ী (ফাইনাল এক্সিট) ভিসা কর্মী নিজে অনলআইনে আবেদন করে নিতে হলে তাকে এর ফি পরিশোধ করতে হবে। যার অনলাইনে কন্ট্রাক্ট নিবন্ধিত হবেনা কিংবা কফিলের সিস্টেম ও তেমন অনলাইন ভিত্তিক হবেনা তিনি এই সুবিধা পাবেন না। তবে কোম্পানি সমূহ অনলাইনে কন্ট্রাক্ট না করলে কি ধরণের শাস্তির মুখোমুখি হবে তা এখনো ঘোষণা করা হয়নি।