করোনার প্রভাবে ২০২০ সালে ১০ লাখের বেশি কর্মীর ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে বৈদেশিক কর্মস্থান খাতে। এই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে দ্রুত মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালুর চেষ্টা করছে সরকার। এজন্য মালয়েশিয়া সরকারের সাথে সম্ভাব্য সব দেনদরবার চালিয়ে যাচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মষংস্থান মন্ত্রণালয়। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে কর্মী পাঠানোর বিষয়ে দেশটির সাথে চুড়ান্ত বৈঠক বা সমঝোতা সই হতে পারে। তবে এবার আগের মতো বিতর্কিত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট থাকছে না বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বাজার চালু হলে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মিলিয়ে ২৮০ টি রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এবার কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিবাসন ব্যয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার বিষয়ে আগেই একমত হয়েছে দুই দেশ। সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যয় বা খরচ নির্ধারণ হতে পারে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। অর্থাৎ একজন কর্মীকে মালয়েশিয়া পাঠাতে এক লাখ ৬০ হাজার টাকার বেশি কোন এজেন্সি নিতে পারবে না। তবে সমঝোতা স্মারকে অভিবাসন ব্যয় আরো কম থাকতে পারে। এই ব্যয় নির্ধারণে মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশ কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও জানা গেছে। সেক্ষেত্রে বেশি টাকা নিয়ে সেই রিক্রুটি এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল পর্যন্তও করতে পারে সরকার। কম অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে মন্ত্রণালয়।
এবিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীয় ইমরান আহমদ প্রবাস বার্তাকে জানিয়েছেন, “আমাদের উদ্যেশ্য হচ্ছে শ্রমবাজারটি চালু করা এবং কর্মী পাঠানো। দেশের স্বার্থ ও কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করেই সব করা হবে। সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়া সরকারের ইচ্ছাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হচ্ছে। কারণ কর্মী নেবে মালয়েশিয়া। বেতন দেবে মালয়েশিয়া। তারা যে পদ্ধতি চাচ্ছে, বাজার খুলতে হলে সেটাকে অগ্রাধিকার দিতে কবে। তবে আমাদের দেশ ও কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করা হবে। আশা করছি জানুয়ারি না হলেও, ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে একটি ভালো খবর আসবে।“
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে কর্মী পাঠানো বিতর্কিত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির কোনটিই এবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে না। মালয়েশিয়া সরকারও তাদেরকে কর্মী পাঠানোর সুযোগ দিবে না। তবে নতুন করে ২৫ থেকে ৩০ টি রিক্রুটিং এজেন্সির নেতৃত্বে মোট ২৮০ টির মতো এজেন্সি কর্মী পাঠাতে পারবে মালয়েশিয়ায়। এবং তাদের সাথে অন্য ব্যবসায়িরাও কর্মী পাঠানোর সুযোগ পাবে। সেক্ষেত্রে আগের মতো এবার এক এজেন্সি অন্য কোন এজেন্সিকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না।
তবে কোন কোন এজেন্সি এবার কর্মী পাঠাতে পারবে তা এখনো পরিস্কার নয়। আর যারা এই তালিকায় থাকবে তারা কোন বিবেচনায় বা যোগ্যতায় স্থান পাবে তাও জানা অস্পষ্ট। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই এজেন্সির তালিকা নির্ধারণ করবে মালয়েশিয়া সরকার।
মালয়েশিয়াসহ বিদেশে কর্মী পাঠাতে একটি অনলাইন পদ্ধতি চালু করছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো-বিএমইটি। সেই পদ্ধিতি চুড়ান্ত হলে কর্মীদের অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রিত থাকবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পদ্ধতিতে কর্মীরা একটি ডাটাব্যাংক থেকে নির্বাচিত হবে। সরাসরি তারা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করবে। এটা হলে কোন রিক্রুটিং এজেন্সি বেশি টাকা নিতে পারবে না বলেও আশা করছেন কর্মকর্তারা। যদিও এখনো অনলাইন পদ্ধতিটি চুড়ান্ত হয়নি।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রবাস বার্তাকে জানান, “মালয়েশিয়া শ্রমবাজার চালু হলে কর্মীরা অনলাইন পদ্ধতিতেই যাবে। সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। তবে বাজার খোলার আগেই নিবন্ধন সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করার কিছু সমসাও আছে। তাই যখনই ঘোষণা আসবে শ্রমবাজার চালু হয়েছে, তখন নিবন্ধন কার্যক্রম সারা দেশে উন্সুক্ত করা হবে।“
তবে ফেব্রুয়ারির মধ্যে শ্রমবাজার চালুর বিষয়ে সমঝোতা সই হলেও কর্মী যেতে সময় লাগতে পারে। কারণ মালয়েশিয়ায় করোনা পরিস্থিতি আবারো অবনতি হয়েছে। লকডাউন বাড়ানো হয়েছে দেশটিতে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে বিদেশি কর্মী নেবে না দেশটি।