বিশেষ প্রতিবেদক, প্রবাস বার্তা: সাধারণ ক্ষমায় দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাকা আরেক বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে কুয়েত সরকারের ক্যাম্পে। সোমবার ( ৪ মে ) কুয়েতের ছেবদি ক্যাম্পে এমরান (৪৩) নামে এক প্রবাসীর মৃত্যু হয়। এর আগে ২ মে ( শনিবার ) রবিউল ইসলাম নামের আরেক বাংলাদেশি আবদালিয়া ক্যাম্পে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া দেশে ফেরার দাবিতে রবিবার রাতে ক্যাম্পে বিক্ষোভ করেছে বাংলাদেশিসহ কয়েকটি দেশের কর্মীরা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কুয়েতের পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
এদিকে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেছেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রবাসীদের চলমান সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে সব ধরণের চেষ্টা করছে।
এপ্রিল মাস জুড়ে চলা সাধারণ ক্ষমা কর্মসূচিতে ১১ থেকে ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য সুযোগ রাখা হয়। শুরুতেই দূতাবাসের গাফিলতিতে প্রথম দিন আবেদনের সুযোগ না পেয়ে ফিরে যেতে হয় প্রবাসীদের। পরের দিন ১২ এপ্রিল থেকে আবেদন করেন বাংলাদেশি কর্মীরা। ৪ দিনে ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি আবেদন করে আত্মসমর্পণ করেছে বলে জানা গেছে। এরপর থেকেই বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের কর্মীদের রাজধানীর বাইরে চারটি ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ক্যাম্প গুলো হলো- আবদালিয়া, ছেবদি, মাঙ্গাফ ও কসর।
সোমবার ছেবদি অভিবাসী ক্যাম্পে মারা যাওয়া এমরানের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলায়। উপজেলার কাজিরগাঁও গ্রামের জুনাব আলীর ছেলে তিনি । তার পাসপোর্ট নাম্বার-BL 0210308 .কুয়েতের সিভিল আইডি নাম্বার-277051027782 সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করে কুয়েত কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন এমরান । হঠাৎ করেই তার মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ক্যাম্পে থাকা প্রবাসীরা।
২ মে মারা যাওয়া হতভাগ্য রবিউল ইসলামের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামের নাঙ্গলকোটে । স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে তিনি মারা যান। ক্যাম্পে থাকা বাংলাদেশিরা জানান, করোনা লক্ষণ নিয়ে মারা যান তিনি। আগের রাত থেকে বুকের ব্যথা ও গায়ে জ্বর অনুভব করছিলেন ওই প্রবাসী । বর্তমানে তার মরদেহ স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
ক্যাম্পে থাকা এক প্রবাসী প্রবাস বার্তাকে বলেন, এই অবস্থায় সেখানে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওই ক্যাম্পের সকলকে গাদাগাদী করে থাকতে হচ্ছে করোনার শঙ্কা নিয়েও। এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
এছাড়াও সম্প্রতি খাবারের মান ও পরিমান নিয়ে অভিযোগ করে সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও প্রকাশ করেছেন প্রবাসীদের কেউ কেউ ( এমন কয়েকটি ভিডিও রয়েছে প্রবাস বার্তার কাছে)। এই পরিস্থিতিতে দূতাবাসের কেউই তাদের খোঁজখবর নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ ক্যাম্পে থাকা প্রবাসীদের।
আরব টাইমস অনলাইন-এর খবর
এদিকে, ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ক্ষোভ জানিয়েছেন কুয়েতের সংসদ সদস্য আব্দুল করিম আল কানদারিসহ একধিক সদস্য। তারা বলেছেন, যে দেশগুলো তাদের লোকদের নিচ্ছে না, সে দেশের শ্রমিকদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার জন্য। কুয়েত ফান্ড যেন ওই দেশগুলোকে তাদের ডেভেলপমেন্টে সাহায্য না করে, সে জন্যও আহাবান জানান কয়েকজন এমপি। আরব উন্নয়ন তহবিলের মাধ্যমে ওই দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য তহবিল সহায়তা স্থগিত করার কাথাও বলেন তারা। যা কুয়েতের জাতীয় কয়েকটি পত্রিকায় বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করে।
এ নিয়ে কথা বলতে দূতালয় প্রধান আনিসুজ্জামান ও শ্রম কল্যাণ সহকারি তৌহিদুল ইসলামকে ফোন ও এসএমএস করা হলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রবাস বার্তাকে জানান, কুয়েতে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানের জন্য দূতাবাসের সাথে কথা বলতে পররাষ্ট্র সচিবকে অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ সেখানে শ্রম উইং-এ কর্মকর্তা না থাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। তিনি আশা করেন, দ্রুতই এই সমস্যার সমাধান হবে। একইসাথে কুয়েতসহ সকল দেশে আইন মেনে চলার জন্য সেখানকার প্রবাসীদের আহবান জানান ড. সালেহীন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে প্রবাসীদের চলমান সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সাথে সব ধরণের চেষ্টা করছে বলেও জানান তিনি।
এরআগে ২৭ এপ্রিল সোমবার কুয়েত থেকে দেশে ফিরেন ১২৬ প্রবাসী। আর ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার আরও ১২১ প্রবাসী ফিরেছেন কুয়েত থেকে। এই ২৪৭ জন প্রবাসী কুয়েত কারাগার থেকে সাধারণ ক্ষমার সুযোগে মুক্তি পান।