বিশেষ প্রতিনিধি: জর্ডান প্রবাসী সাংবাদিক সেলিম আকাশকে আটকের পিছনের নানা রহস্য উঠে আসছে। তার সহকর্মী ও স্বজনদের অভিযোগ, দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তার কারণেই আটক হয়েছেন সেলিম আকাশ। যদিও দূতাবাস অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জানা গেছে, সম্প্রতি জর্ডান প্রবাসীদের খাদ্য সংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেন সেলিম। জাগোনিউজে ঐ রিপোর্টের শিরোনাম ছিল – “করোনাভাইরাস: জর্ডানে খাদ্য সংকটে ৩০ হাজার বাংলাদেশি”। এই রিপোর্টের জেরেই সেলিমকে গ্রেফতার করানো হয় বলে অভিযোগ তার স্বজন ও সহকর্মীদের।
আটকের আগে এই রিপোর্টের বিষয়ে দূতাবাসের এক কর্মকর্তার ( দূতালয় প্রধান ) সাথে সাংবাদিক সেলিম আকাশের কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ এসেছে প্রবাস বার্তা’র কাছে। যেখানে দূতাবাসের ঐ কর্মকর্তা সেলিমকে বলছেন- “আপনি যে এই সংখ্যাটা যে দিলেন ২৫-৩০ হাজার, সেটা দূতাবাসের সাথে আলাপ করে দিয়েছেন বা কিসের ভিত্তিতে দিলেন?”
সেলিম জানান, “জর্ডানে দেড়লাখ প্রবাসীর মধ্যে ৩০ হাজারের মতো অবৈধ। তাই প্রায় ত্রিশ হাজারের মতো প্রবাসী দুর্ভোগে আছে এই করোনাভাইরাসের প্রভাবে। সেটাই তুলে ধরেছি।”
ঐ কর্মকর্তা বলেন, ” দূতাবাস কিছুই করছে না ( রিপোর্টে আছে- প্রবাসীদের অভিযোগ, দূতাবাস খোঁজ নিচ্ছে না) লিখেছেন, দূতাবাস তো তালিকা করছে সেটা কেন লিখেননি?”
সেলিম বলেন, “আমিতো আপনাকে এবং মনির ( প্রথম সচিব শ্রম) স্যারকে ফোন দিয়েছি, আপনারা তো কোন কিছু জানাননি।”
সাড়ে তিন মিনিটের অডিও রেকর্ডে শোনা যায় দূতাবাসের ঐ কর্মকর্তা সেলিমের রিপোর্টে খুবই অসন্তোষ হয়েছেন। তিনি উচ্চস্বরে কথা বলছিলেন।
এ বিষয়ে দূতালয় প্রধান মোঃ বশির প্রবাস বার্তাকে জানান, “সেলিমের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে বলেই তার সাথে আমি কথা বলেছি। তার রিপোর্টের তথ্য সঠিক না থাকায় অসন্তোষ দেখিয়েছি। কিন্তু তার মানে এই নয়, তাকে গ্রেফতার করানোর মতো কোন মানসিকতা নিয়ে কথা বলেছি। সেলিম আকাশ গ্রেফতারের পর থেকেই তাকে মুক্ত করার বিষয়ে দূতাবাস সর্বাত্মক কাজ করছে।”
তিনি আরো বলেন, ” সেলিম আকাশ বাংলাদেশি নাগরিক। তাকে গ্রেফতার করালে দূতাবাসের লাভ কী? জর্ডান পুলিশই নিজেদের দেশের প্রচলিত আইনে তাকে গ্রেফতার করেছে বলে আমরা জেনেছি।”
পরিবারের অভিযোগ, এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই দূতাবাসের কয়েকজন কর্মকর্তারা সেলিম আকাশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকেন। জর্ডানে স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ বসবাস করে আসছেন সেলিম আকাশ। তার স্ত্রী জোনা আকাশ জানান, ১৩ এপ্রিল গ্রেফতারের পর আকাশের বিরুদ্ধে বুধবার (১৫ এপ্রিল) জর্ডান পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করেছে।
জর্ডানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নাহিদা সোবহান গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, সেলিম আকাশ আটক হওয়ার বিষয়টি জানার পর দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উত্তর আসেনি। তিনি দাবি করেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই প্রবাসী সাংবাদিকের নামে কোনো অভিযোগ দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে করা হয়নি।
সেলিম আকাশ আটকের পর থেকেই সাংবাদিক এবং প্রবাসীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের দেশে দেশে প্রতিবাদ শুরু করেছেন সাংবাদিকরা। প্রবাসী সাংবাদিকদের অনেকেই জানান, প্রবাসীদের বিষয়ে নিউজ করতে গেলে, বেশিরভাগ সময় দূতাবাসের কারো বক্তব্য পাওয়া যায় না। অনেকেই কোন তথ্য দিতে চান না। সেলিম আকাশের প্রতিবেদনের সময় তিনি দূতাবাসের তিন জন বড় কর্মকর্তার সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। তারা কোন তথ্য দেননি। রিপোর্টে সেই বিষয়গুলোও রয়েছে।
এদিকে প্রবাসী সাংবাদিক সেলিম আকাশকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছেন রিপোর্টার্স ফর বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস-আরবিএম এর সভাপতি ফিরোজ মান্না ও সাধারণ সম্পাদাক মাসউদুল হক। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, সাংবাদিক সেলিম আকাশকে গ্রেফতারের পিছনে দূতাবাসের যারা জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া জরুরি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখবেন বলে আশা করেন আরবিএম সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সেলিম আকাশের দ্রুত মুক্তি দাবি করেন তারা।