মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, ইউএইঃ সোমবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০.৫ মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে আবুধাবি উদ্দেশ্যে যাওয়ার কথা ছিলো বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি ০১২৭। রাতে সাড়ে ৯টার সময় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। এরপর রাত ১০.৫ মিনিটের সময় বিমান যাত্রা শুরু করে। প্রায় আধাঘণ্টা মতো বিমানটি উড্ডয়নের চেষ্টা চালাই, কিন্তু ক্যাপটেন কুয়াশার কারণে যেতে পারছেন বলে জানান। পরে আরেক দফা চেষ্টা চালানো হয়। তাতেও ব্যর্থ হন। এর পর ক্যাপটেনের প্ক্ষ থেকে বলা হয় আপনারা হাত ব্যাগেজ নিয়ে নেমে জান, আপনদেরকে হোটেল এ নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু ওয়েটিং রুমে নেওয়া পর হোটেল দেওয়া হবেনা এরকম একটি সংবাদ পান প্রবাসীরা।
এর পর হট্টগোল, স্লোগান, প্রবাসীরা হোটেল দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এক পর্যায়ে একজন কর্মকর্তা এসে প্রথমে মেয়েদের এবং যারা আন্দোলন করেছেন তাদেরকে হোটেলে নিয়ে যাই। তথা মোট ২৭৪ জন যাত্রী থাকলেও ১৮৮ জনকে হোটেলে নিয়ে যান তারা, বাকী ৮৬ জনকে ওয়েটিং রুমে আটকে রাখা হয়। গাড়ীর অভাবে তাদের হোটেলে নেয়া হচ্ছেনা বলে জানান একজন কর্মকর্তা। সেখানে মশার কামড়ে অনিদ্রাই রাত কাটান নিরিহ এসব প্রবাসীরা।কেউ কেউ মসজিদের (এবাদত খানা ) ফ্লোরে শুয়ে রাত কাটান। এটা একটা জাতির জন্য লজ্জাজনক ঘটনা বলে মনে করেন যাত্রীরা। আমরা ভদ্রতা দেখিয়েছি বলে আমাদের এই অবস্থা কেননা যারা আন্দোলন করেছেন তাদেরকে হোটলে দেওয়া হয়েছে। মানে আরেকটা বৈষম্যর স্বীকার এসব প্রবাসীরা। প্রবাসীদের প্রশ্ন আসলে কি গাড়ীর অভাব ছিলো নাকি চরম অবহেলা ছিলো? আর এটিও কি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হবে? তাহলে বাকীদের কাজ কি? ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট এর সাথে গাড়ির দেওয়ার চুক্তি কাদের সাথে ? তারা প্রয়োজনে গাড়ির ব্যবস্থা করতে না পারলে তাদের সাথে কন্ট্রাক্ট বাতিল করার দাবী জানান প্রবাসী যাত্রীরা। রাতে বিমান বন্দরে দায়িত্ব প্রাপ্ত লোক থাকেনা কেনো? থাকলে তিনি ঐ সময় কোথায় ছিলেন?
আর যাদের হোটেলে নেওয়া হয়েছে তাদের পন্যবাহী সিটির ৬ নাম্বার বাস তথা অনেকটা রোডে চলাচল অযোগ্য বাস দিয়ে হোটেলে নেওয়া হয়েছে। আর গাড়ীর ড্রাইভারের গাড়ি চালানো দেখে অনেকে মনে করছেন তাদের মনে হয় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নাই। এসময় অনেকে বলে প্রবাসীরা সোনার ছেলে হলে অবশ্যই ভালো বাসে করে যেতে পারতাম কিন্তু আমরাতো কামলা, তাই এরচেয়ে ভালো আর কি দিবে সরকার ? অন্যদিকে হোটেলে সকালের নাস্তার খবর কাউকে কাউকে জানানো হলেও অনেককে নাজানানোর কারণে খালি পেটে বিমান বন্দরে ফিরে আসে অনেকে। হয়তো প্রবাসীদের সেবা দেওয়ার কথা বলে প্রচুর টাকার হোটেল, নাস্তা ও গাড়ির ভাড়ার বিল বানানো হবে, প্রশ্ন আসলে কি সেবা পেয়েছেন প্রবাসীরা। তাই এই অব্যবস্থাপনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রবাসী যাত্রীরা। এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের একজন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তারা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীকে এটি অবহিত করার জন্য ওনার ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছে তিনি রিসিভ না করার কারণে ওনাকে জানানো সম্ভবব হয়নি।
এর পর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার সময় পুনরায় বিমান যাত্রা শুরু করেন। কিন্তু যাত্রা শুরুর সাথে লাইট নাজ্বলার ত্রুটি ধরা পড়ে আবারো শুরু হয় বিড়ম্বনা। এক পর্যায়ে প্রবাসীদের মাঝে ব্যপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, এসময় কেউ কেউ এই বিমানে করে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিমান ক্রুদের জানান, অনেকে বিমান থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন তখন বিমান ক্রুরুরা তাদের বুজিয়ে সুজিয়ে সিটে বসান।কালকে কুয়াশার কথা বললেও মূলত যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিমানটি যেতে পারেনি বলে জানান অনেক যাত্রী।এ বিমানের বডিং ব্রিজ খারাপ সিড়ি দিয়ে বিমানে ওটতে হয়েছে, খাবার তুলা হয়েছে হাই লোডার দিয়ে এরকম বিভিন্ন ত্রুটির কারণে প্রবাসী যাত্রীরা আতংকিত হয়ে পড়েন। এদিকে আবার আজকের মধ্যে আরব আমিরাতে পৌছতে না পারলে অনেকের ভিসা ক্যানসেল হয়ে যাবে বলেন তারা, তাই এ সময় উভয় সংকটের সম্মুখীন হয় প্রবাসীরা।
শেষমেশ সকাল ১১টার পর আবারো ক্যাপটেন পারভেজের নেতৃত্বে আবুধাবির উদ্দেশ্যে ২৭৪ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। আবুধাবি সময় ৩টা ২০ মিনিটে আবুধাবি পৌছার পর যাত্রীদের দুর্ভোগের সমাপ্তি ঘটে।