আহমাদুল কবির, মালয়েশিয়া: মালয়েশিয়া থেকে অবৈধ বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চলতি মাসেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা টু মালয়েশিয়া রুটে বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটের পাশাপাশি অতিরিক্ত ১৬টি বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করবে।
বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষিত ব্যাক ফর গুড কর্মসূচীর আওতায় দেশে ফিরছেন অবৈধ বাংলাদেশিরা। তবে উড়ো জাহাজের আকাশ ছোয়াঁ টিকিটের বৃদ্ধি ও টিকিট সংকটে আটকে আছেন অনেকে। তাদের দেশে ফিরাতেই বিশেষ এই ফ্লাইট পরিচালনা করবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রবাসী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনতে বোয়িং ৭৩৭ ও ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। মালয়েশিয়া সরকারে ঘোষিত ব্যাক ফর গুড কর্মসূচীর আওতায় উড়ো জাহাজ টিকেট সঙ্কটে আটকে পড়াদের সহায়তা করতে ও সুস্থভাবে ফিরিয়ে আনতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ‘জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থা হিসেবে দেশের মানুষের প্রতি বিমানের সবসময়ই একটি দায়বদ্ধতা রয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সেই দায়বদ্ধতা থেকেই দেশের মানুষ ও প্রবাসী শ্রমজীবী ভাই-বোনদের প্রতি দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে এই বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করছে।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, ‘আমাদের প্রবাসী ভাইদের সাহায্য করতে পেরে আমরা আনন্দিত। দেশের ও দেশের মানুষের স্বার্থ ও প্রয়োজনে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ দপ্তর সংস্থাগুলো সবসময়ই প্রস্তত।’
বর্তমানে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করছে ৬টি এয়ারলাইনস। দেশীয় এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলা, রিজেন্ট এয়ারলাইনসের ঢাকা-কুয়ালালামপুর রুটে ফ্লাইট রয়েছে।
অন্যদিকে বিদেশী এয়ারলাইনসের মধ্যে ফ্লাইট রয়েছে মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস, মালিন্দো এয়ার ও এয়ার এশিয়ার। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের জেনারেল ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশনস) মো. কামরুল ইসলাম জানান, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ১৫, ১৭ ও ১৯ ডিসেম্বর ঢাকা-কুয়ালালামপুর ও কুয়ালালামপুর-ঢাকায় ১৬, ১৮ ও ২০ ডিসেম্বর তিনটি অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এ দিকে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানায়, গত বুধবার মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতো ইনদিরা খায়রুল জাইমি দাউদের সঙ্গে হাইকমিশনার মহ.শহীদুল ইসলাম দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈঠক করেন।
ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে সাধারণ ক্ষমার আওতায় বাংলাদেশের অবৈধ কর্মীদের দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি, ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশীদের জন্য যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত নিশ্চিতকরণ; ছাত্র, প্রফেশনাল ও শ্রমিকদের ভিসা রিনিউ প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশীদের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ায় আরো সহায়তা প্রদানসহ অন্যান্য বিষয়াদি প্রাধান্য পায়।
ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির সর্বশেষ অবস্থা বাংলাদেশ হাইকমিশনারের কাছে বর্ণনা করেন দাতো খায়রুল। এ কর্মসূচির আওতায় গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৯ হাজার বাংলাদেশী অবৈধ অভিবাসী সাধারণ ক্ষমার আওতায় সুবিধা নিয়েছেন। আরো তিন হাজার আবেদন পড়েছে। মোট আবেদন পড়েছে প্রায় ৩২ হাজার। বাংলাদেশের কর্মীদের এ সাড়া প্রদানকে হাইকমিশনারের কাছে উৎসাহব্যঞ্জক উল্রেখ করেন তিনি।
একটি সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শ্রমবাজারের অসঙ্গতিগুলো দূর করতে কাজ করছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের যে সিন্ডিকেট তা ভেঙে দেয়া হয়েছে। আমরা একদিকে অবৈধদের ফেরত পাঠানো এবং নতুনদের জন্য কাজের সুযোগ উন্মুক্ত করা নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশের হাইকমিশন।
ব্যাক ফর গুড কর্মসূচি ঘোষণার আগে দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অভিবাসীদের জেল, জরিমানা ও বিভিন্ন ধরনের আইনানুগ শাস্তির সম্মুখীন হতে হতো, যা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর। মালয়েশিয়া সরকারের সাধারণ ক্ষমার সুযোগ পেয়ে দেশে ফিরে যেতে ইচ্ছুক অবৈধ অভিবাসীরা দারুণভাবে উচ্ছ্বসিত এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে মালয়েশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানানো হয়েছে।
ব্যাক ফর গুড কর্মসূচির আওতায় মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরার কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হবে ৩১ ডিসেম্বর।