মোহাম্মদ আলী: সম্মানিত বায়রা সদস্য ভাই ও বোনেরা, ম্যানপাওয়ার সেক্টরের ব্যাপারে এদেশের অনেকের এলার্জি থাকা সত্বেও আজ এটাই প্রমানিত যে, এ সেক্টরের উপরেই দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূলভিত্তি। বায়রা’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ অনেকেই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছে। তাইতো প্রতিনিয়তই বায়রা পরিবারের মান মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আমার দেখায় বর্তমানে বায়রা’র সাথে আমাদের মিনিস্ট্রি, বিএমইটি, প্রশাসন, সাংবাদিক, এনজিও, আন্তর্জাতিক সংস্থা সমূহ, সুশীল সমাজ তথা সর্বস্তরের জনগণের সবচাইতে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। এটি আসলে একদিনে সাধিত হয়নি। বায়রা’র নিরলস কর্মতৎপরতাই সেটি সম্ভব হয়েছে। ক্ষোদ প্রধানমন্ত্রী এখন নিয়মিত আমাদের এ সেক্টরের খোজ খবর নিচ্ছেন। এতে নিশ্চয়ই আমাদের মর্যাদাকে আরো বুলন্দ করবে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
বায়রা’র কর্মযজ্ঞের কিয়দাংশ আপনাদের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করতে চাই।
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর যখন সৌদির বাজার উম্মুক্ত হচ্ছিলো, বায়রা পরিবার দখিনা হাওয়ার শীতলতা অনুভব করতেছিলো ঠিক তখনই কিছু সংখ্যক অসাধু পুলিশের অমানবিক অত্যাচার, স্থানীয় ও দলীয় মাস্তানের মাস্তানী, সর্বোপরি মানব পাচার আইনের কালো থাবা সব লন্ড ভন্ড করে দিতেছিলো। দুর্বিষহ দুঃশ্চিন্তায় দিশেহারা সবাই অস্তিত্ব সংকটে ভুগছিলো, ঠিক তখনই আমাদের প্রিয় সংগঠন বায়রা প্রসাশনের উচ্চ পর্যায়ে বার বার নয়, শতবার বৈঠক করে আলোচনা আজ অবদি অব্যাহত রাখে এবং মাঠ পর্যায়েও সর্বস্তরের বায়রা সদস্যদের সুসংগঠিত প্রতিরোধে বায়রা পরিবারে স্বস্তি ফিরে আসে। মানব পাচার আইনের কালো থাবা কিঞ্চিত স্তিমিত হয়। বন্ধ হয় পুলিশি হয়রানি। বায়রা’র সেই অব্যাহত প্রচেষ্টায় মন্ত্রণালয়ের সাথে যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছে তারই বদৌলতে মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয় মানবপাচার আইন সংশোধনের জন্য অফিসিয়াল উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। ইতিমধ্যেই আপনারা সে চিঠির কপি দেখতে পেয়েছেন। আশাকরি অচিরেই আমরা সেই কালো আইন থেকে মুক্তি পাবো ইনশাআল্লাহ ।
প্রিয় বন্ধুগণ,
বিএমইটি তে আমাদের কতো সমস্যা। গৃহকর্মীর ট্রেনিং এ ভর্তি জটিলতা কতোবার কতোভাবে হয়েছিলো। গৃহকর্মীর বাছাই প্রক্রিয়া, ম্যানপাওয়ার ক্লিয়ারেন্স জটিলতা, সার্ভার লক জটিলতা, প্রতিনিয়ত অভিযোগ (গৃহকর্মী সংক্রান্ত অগণিত), বিশেষ করে ব্র্যাক কর্তৃক একদিনে ১২৪ টি এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা, এ সমস্ত হাজারো সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানতো আমাদের প্রিয় সংগঠন বায়রাই করেছে। লাইসেন্স নবায়ন, প্রোপ্রাইটরশিপ জটিলতা সহ অনেকগুলো সমস্যার সমাধান এখন প্রায় সমাধান হওয়ার পথে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিসের অর্ডারও ইতিমধ্যে হয়েগেছে। আমরা এর সুফল অতিশীঘ্র পাবো ইনশাআল্লাহ।
সবচাইতে বড় কথা হলো মিনিস্ট্রি এবং বিএমইটি’র সাথে কতটুকু সুসম্পর্ক বিরাজ করলে মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয়ের নেতৃত্বে পুরো মন্তনালয় বিএমইটিকে নিয়ে বায়রা সচিবালয়ে ২ ঘন্টা বায়রার সাথে মিটিং করতে পারে। বায়রাকে মন্ত্রণালয়ের পার্টনার ঘোষণা দিতে পারে। প্রিয় ভাই ও বোন একটিবার কি ভেবে দেখেছেন আমাদের সম্মান কোন পর্যায়ে উঠেছে?
আমার প্রিয় শ্রদ্ধাভাজন ভাই ও বোন,
সৌদি এম্বেসীতেও আমাদের ধকলতো আর কম যায়নি। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জটিলতা, মহিলা কর্মীর আনুপাতিক হারে পুরুষ কর্মীর বই জমা, রিটার্ন বইয়ের উপর পয়েন্ট দিয়ে ইনজাজ আইডি লক করে দেয়ারমত জঘন্য শাস্তি, এজেন্সি মালিকগণের গ্রাজুয়েশন সার্টিফিকেট জটিলতাসহ নানাবিধ সমস্যাতো এই বায়রা ই করেছে।
সর্বোপরি বর্তমান বায়রা গত ১০ মাসে দীর্ঘ ১০/১২ বছরের জমে থাকা প্রায় ১৮ কোটি টাকার ট্যাক্স সমস্যার সমাধান করে বায়রা কে মহা সমস্যা থেকে মুক্ত করে। একই সময়ে প্রায় ৮ কোটি টাকার ট্যাক্স মওকুফ করাতে সামর্থ্য হয়।
বায়ার সদস্যদের বহুকাঙ্খিত আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক ট্রেনিং সেন্টারটির কাজও অতিদ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। কয়েকমাস পরই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেটি উদ্ভোদন করবেন বলে আশা রাখি ইনশাআল্লাহ। এ ট্রেনিং সেন্টারটিরটি আমাদের কতো কাজে লাগবে, কতো সমস্যার সমাধান ঘটাবে তা এ পরিসরে লিখা সম্ভব নয়।
বসুন্ধরার জমির প্রায় ৩২ কোটি টাকা এ যাবৎ পরিশোধ করা হয়েছে। বায়রা ও আমাদের সম্মানিত সিনিয়র ভাইদের সমন্নিত সর্বোচ্চ সহযোগিতায় বসুন্ধরার জমির সমাধানও প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইনশাআল্লাহ পরিকল্পনা মাফিক এগুতো পারলো সেটাকে আমরা বাংলাদেশের সর্বাধুনিক সেটেলাইট সিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবো বায়রার সকল সদস্যদের জন্য। প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা।
মগবাজার ও কাকরাইলের জমির সংকট সমাধান কল্পে সিনিয়রদের সহযোগিতা নিয়ে কাজ চলছে। আশাকরি সমাধান অচিরেই গোচরীভূত হবে ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা,
বর্তমান ইসির প্রতিটি সদস্য অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সর্বোচ্চ স্বচ্চতার ভিত্তিতে সকল বায়রা সদস্যদের কল্যাণে প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বায়রা’র বিশাল কর্মযজ্ঞ হয়তো এ স্বল্প পরিসরে বর্ননা করা সম্ভব নয়।
তবে যেটুকু লিখেছি এটুকু আপনার সুবিবেচনার জন্য রাখলাম। সামান্য সমাধানযোগ্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে বায়রা’র এ বিশাল অর্জন, আমাদের মান-মর্যাদা আমরা কি ধূলিষ্যাৎ করে দিতে পারি? নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারতে পারি? কি ফলাফলের অপেক্ষায় আমরা?
লেখক: মোহাম্মদ আলী, স্বত্ত্বাধিকারী
এ্যাকটিভ ম্যানপাওয়ার সার্ভিসেস
ইসি মেম্বার, বায়রা, ২০১৮-২০২০
(এই বিভাগের লেখার সাথে প্রবাস বার্তা’র সম্পাদকীয় নীতির কোন সম্পর্ক নেই। এটা লেখকের নিজের মতামত। লিখতে পারেন আপনিও)