বিশেষ প্রতিনিধি : সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে ভিসা সার্ভিস সেন্টারের বিরোধিতায় নেমেছেন বায়রার সাধারণ সদস্যরা। তাদের দাবি ভিসা সার্ভিস সেন্টারের নামে নতুন করে সৌদি আরবের শ্রমবাজার দখলে নেমেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী ।এর প্রতিবাদে লাগাতার কর্মসূচি নামছেন কয়েক’শ রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক।
সম্প্রতি সৌদি আরবের ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ঢাকায় রাজকীয় সৌদি দূতাবাস দুটি সার্ভিস সেন্টারকে অনুমোদন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে। যদিও এবিষয়ে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই ভিসা সার্ভিস সেন্টারের দায়িত্বে রয়েছেন বায়রার সাবেক সভাপতি বিতর্কিত মালয়েশিয়া সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য নূর আলী এবং বায়রার সাবেক সহ-সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সিনিয়র সদস্য আব্দুল হাই। দুই রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে ভিসা সেন্টারের দায়িত্ব দেয়াতেই আপত্তি বায়রার সাধারণ সদস্যদের।
সার্ভিস সেন্টারের নেতৃত্বে থাকা বায়রার বর্তমান কমিটির সদস্য আব্দুল হাই বলেন, “সৌদি দূতাবাস ভিড় কমাতে সার্ভিস সেন্টার করেছে। তারা ( দূতাবাস) কূটনৈতিক এলাকায় স্থানান্তরিত হচ্ছে। তাই সেখানে সকল এজেন্সি ভিড় করলে সমস্যা। এই চিন্তা করেই ভিসা সার্ভিস সেন্টার করা হয়েছে।”
বায়রার সিনিয়র সদস্য এবং ভিসা সার্ভিস সেন্টার বিরোধী আন্দোলনের আহবায়ক আব্দুল আলিম প্রবাস বার্তাকে বলেন, এই ভিসা সার্ভিস সেন্টার প্রতিষ্ঠা পেলে সাধারণ ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক গোপনীয়তা নষ্ট হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “সৌদি আরব থেকে ভিসা আসবে আমার প্রতিষ্ঠানের নামে। সেখানে নিয়েগদাতার নাম ঠিকানা থাকবে। সার্ভিস সেন্টার চাইলেই সেই নিয়োগদাতার সাথে যোগাযোগ করে আমার ব্যবসা নিয়ে নিতে পারবে। এবং নিয়োগদাতারা যখন দেখবে সকল ভিসা প্রসেস করছে দুটি প্রতিষ্ঠান , তখন আমাদেরকে আর ভিসা দেবে না।” এভাবেই শ্রমবাজারটি নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন জনশক্তি রফতানি খাতের সিনিয়র এই ব্যবসায়ি।
ভিসা সার্ভিস সেন্টার বিরোধী আন্দোলনের সদস্য সচিব কে এম মোবারক উল্লাহ শিমুল প্রবাস বার্তাকে বলেন, “এই সার্ভিস সেন্টার বায়রার সাধারণ সদস্যদের স্বার্থ বিরোধী। সাধারণ সমস্যরা সবাই একজোট হয়েছে এর বিরুদ্ধে। দুইজন ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে সৌদি ভিসা সেন্টার খুলেছে এবং পুরো সৌদি শ্রমবাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছে। কথিত সার্ভিস সেন্টার বাতিল না হলে আমরা লাগাতার আন্দোলন চালাবো”
দূতাবাসে দেয়া বায়রার চিঠি
এদিকে ভিসা সার্ভিস সেন্টারকে সমর্থন দিয়ে বায়রার পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে ঢাকায় রাজকীয় সৌদি দূতাবাসে। বায়রার প্যাডে এই চিঠির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সদস্যরা। তারা বলছেন, সাধারণ সভা না ডেকে, সদস্যদের পরামর্শ না নিয়ে সংগঠনের নামে এমন বড় সিদ্ধান্তের চিঠি বায়রা দিতে পারে না।
সৌদি ভিসা সার্ভিস সেন্টারের বিষয়ে বায়রার অবস্থান কী- এমন প্রশ্নে মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, “এটা সৌদি সরকার করেছে। এতে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। তবে সাধারণ সদস্যদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বায়রার সভাপতিকে তদারকির দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তাই বায়রা সদস্যদের স্বার্থ বিরোধী কিছু হবে না।”
এদিকে, সৌদি ভিসা সার্ভিস সেন্টারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি ডাক দিয়েছেন সাধারণ সদস্যরা। শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর বিজয়নগরের ফার্স হোটেলে প্রতিবাদ সভা করবে তারা। সেখান থেকে নতুন করেমসূচির ডাক দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। মন্ত্রণালয়, বিএমইটি এবং বায়রা ভবনের সামনে মানববন্ধন, স্মারকলিপি, প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিসহ নানা কর্মসূচি আসতে পারে বলে জানা গেছে। এই কর্মসূচির সাথে সাধারণ সকল সদস্যেকে সম্পৃক্ত করার কাজ করছেন আন্দোলনের নেতারা।
অনদিকে, একইদিন সৌদি ভিসা সেন্টারের পক্ষের নেতারা গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলে সভা ডেকেছেন। সার্ভিস সেন্টার সম্পর্কে সাধারণ সদস্যদের বিভ্রান্ত না হওয়ার বিষয়ে ঐ সভায় আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। তবে সাধারণ সদস্যদের অধিকাংশই আন্দোলনকারীদের সভায় যাবেন বলে আলোচনা রয়েছে।
https://youtu.be/F4JLCSGIH9Q